হঠাৎ দেখা ছোট নাটা বটের

ছোট নাটা বটের
ছোট নাটা বটের

৬ আগস্ট। একপশলা বৃষ্টি শেষে কুষ্টিয়ায় আমার ঘরের জানালার বাইরে ঘাসের মধ্যে একটি পাখিকে হেঁটে বেড়াতে দেখে মনে হলো, খামারে চাষ করা কোয়েল পাখির ছানা। কিন্তু হঠাৎ করে পাখিটি আকাশমুখী ছোট্ট উড়াল দিয়ে কিছুটা দূরের ঘাসের ভেতর চলে গেলে বোঝা গেল, এটা প্রাপ্তবয়স্ক। ধুরন্ধর ধাঁচের খুদে পাখিটি মোটেও স্থির ছিল না। তবে আপাতদৃষ্টিতে বোঝা গেল, এটা সাধারণ কোয়েলের থেকে রংঢঙে কিছুটা অন্য রকম। ঘরের ভেতর থেকেই সতর্কতার সঙ্গে পাখিটিকে ক্যামেরাবন্দী করে আমার পাখিপ্রেমী বন্ধু সদানন্দ মণ্ডলকে জানালে তিনি পাখিটিকে দেখার আশায় দ্রুত হাজির হলেন। খাবার খুঁজতে খুঁজতে খুদে পাখিটি আমাদের আরেকবার দেখা দিয়ে চোখের আড়াল হলো। সদানন্দ ক্যামেরাবন্দী ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে এবং ইন্টারনেটে তথ্য ঘেঁটে প্রাথমিকভাবে পাখিটিকে স্মল বাটন কোয়েল হিসেবে চিহ্নিত করলেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিশিষ্ট পাখিবিশারদ রোনাল্ড হালদারের শরণাপন্ন হলাম।
ছবি দেখে তিনি বললেন, কোয়েলের এই প্রজাতিটি বাংলাদেশে খুবই বিরল এবং এর নাম স্মল বাটন কোয়েল। পাখিবিশেষজ্ঞ শরীফ খানের সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানালেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে এই প্রজাতিটিকে বাগেরহাটের ফকিরাহাটে একবার দেখেছিলেন।
পাখিটির বাংলা নাম ছোট নাটা বটের, ইংরেজি নাম Small Buttonquail এবং বৈজ্ঞানিক নাম Turnix sylvatica।        কোয়েল ও বাটন কোয়েল প্রজাতির মধ্যে এরা ছোট প্রজাতির কোয়েল পাখি। গুটুলি আকৃতির এই পাখিকে প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া এবং ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করা দুরূহ। এরা সুচালো লেজওয়ালা খুদে ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১৩ সেমি, ঠোঁট ১ সেমি, ডানা ৭ সেমি, লেজ ৩.৫ সেমি, ওজন ৪০ গ্রাম)। নিষপ্রভ বাদামি রঙের ছোট নাটা বটের পাখির বুকের অংশ মরচেময়, ঘাড়ের অংশ কিছুটা লালচে, পিঠ লালচে কালো, দেহতল পিতাভ সাদা, মাথার চাঁদি বাদামি, সুচালো ঠোঁট কিছুটা কালচে, মণি বাদে চোখের বাকি অংশ সামান্য হলদেটে। পায়ের রং লালচে, যা কিনা ব্যারেড বাটন কোয়েল ও কমন কোয়েলের থেকে আলাদা। মেয়ে পাখি পুরুষটির থেকে আকারে বড় ও উজ্জ্বল পালকযুক্ত।

সাধারণত তৃণভূমি, উষ্ণ ঘাসযুক্ত বন ও নল-খাগড়া বা কাশবনে দৌড়ে উইপোকা, শস্যদানা, ঘাসবীজ কালো পিঁপড়াসহ অন্যান্য পোকা খুঁজে খায়। এরা ডরর-র-র-র—হু-ও-ও শব্দে ডাকে। প্রজনন মৌসুমে মেয়ে পাখিটি পুরুষটির সঙ্গে মিলনের পর ডিম পাড়া হলে পুরুষটিকে ডিমের দায়িত্ব দিয়ে অন্য পুরুষ পাখির সঙ্গে আবার মিলনে লিপ্ত হয়। এভাবে বেশ কটি পুরুষ পাখির সঙ্গে মেয়েটি একই মৌসুমেই কয়েকবার প্রজনন-প্রক্রিয়া চালাতে থাকে। পুরুষটি ১২-১৪ দিন ডিমে তা দিয়ে ছানা ফোটায়। ডিম ফুটে বের হওয়া ছানাগুলো কয়েক ঘণ্টা পরই খুব জোরে দৌড়াতে পারে এবং ৭-১০ দিনেই উড়তে শেখে, ১৮ দিনের মধ্যে নিজের খাদ্য ও বাসস্থান খুঁজে পেতে সক্ষম হয়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং দিন দিন এদের আবাস্থল বিপন্ন হওয়ার ফলে এ প্রজাতির সংখ্যা বাংলাদেশে কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেছে।