রামপালের খালে অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ আবার শুরু

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় সরকারি বিভিন্ন খাল অবৈধ দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসন আবার অভিযান শুরু করেছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ছয়টি খালের ২১টি অবৈধ বাঁধ গতকাল বুধবার অপসারণ করা হয়।
মংলা সমুদ্রবন্দর এবং মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশের পর প্রশাসন তৎপর হয়। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গঠন করা হয় পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকালের উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেন।
রামপালের খাস খতিয়ানভুক্ত খালগুলো দখলমুক্ত করার জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনার এবং বাগেরহাটের জেলা প্রশাসককে গত ডিসেম্বরে এক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ গত ২৩ ডিসেম্বর রামপাল সদর ইউনিয়নের উড়াবুনিয়া খালের বাঁধ কেটে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেন। এ সময় রামপাল উপজেলা প্রশাসন মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত ২৩টি প্রধান খাল চিহ্নিত করে তালিকাভুক্ত করে। কিন্তু ওই অভিযান কিছুদিনের মধ্যেই থেমে যায় এবং স্থানীয় প্রভাবশালী অবৈধ দখলদার ও চিংড়িচাষিরা সেগুলো আবার দখলে নিয়ে নেন। মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক নৌ-প্রটোকল চুক্তিভুক্ত নৌপথ।
সরকারি সূত্র জানায়, রামপাল উপজেলায় দুই শতাধিক খালের বেশির ভাগই অবৈধ দখলে রয়েছে এবং একটি বড় অংশ ভরাট করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারে যে অনেক সরকারি খালের জমি বিভিন্ন সময়ে বেআইনিভাবে ব্যক্তি মালিকানায় খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। ইউনিয়ন তহশিল অফিসের মাধ্যমে উপজেলা তহশিল অফিস এ ধরনের দখল হওয়া জমির তালিকা তৈরি করেছে।
সরকারি সূত্র জানায়, মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ প্রায় ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নিবিড় খননকাজ করছে। গত জুন মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এদিকে খননকাজ অবাধ রাখার সুবিধার্থে চ্যানেলটির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন খালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে স্লুইস গেট নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা হয়েছে।
রামপালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব কুমার রায় বলেন, গতকাল উচ্ছেদ অভিযানে উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়নের স্যাদুল্লার খালে দুটি, পেড়িখালী ইউনিয়নের কাপালী ও আমতলা খালে পাঁচটি, রাজনগর ইউনিয়নের গড়ের খাল ও ছোট গড়ের খালে আটটি এবং উজলকুড় ইউনিয়নে বেতিবুনিয়া খালে ছয়টি স্থানে অবৈধ বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে।
বাঁধ অপসারণের অভিযানে স্থানীয় জনসাধারণ খুশি হলেও সুবিধাভোগীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। উপজেলার গিলাতলা গ্রামের হাওলাদার ফরিদ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রামপাল ও মংলার কিছু লোক পরের জমি ও সরকারি খাল আটকে বাঁধ দিয়ে খাতি খাতি জি (জিহ্বা) লম্বা হয়ে গেছে। তারা মাইনষের (মানুষের) জমি দখল করে খালিও হারির টাকা (জমির ভাড়া) দেয় না। এখন সরকার বাঁধ কাটলিও তানারা দাঁড়ায় দ্যাহা (দেখা) ছাড়া কিছু করতি পারতিছে না।’
তবে বাঁশতলী ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং ইউপি সদস্য গাজি আলমগীর হোসেনসহ অনেকেই মনে করেন, স্যাদুলার খালে বাঁধ না থাকলে এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হবে। গাজি আলমগীর বলেন, ৩০ বছর বছর ধরে এই খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে বরং মানুষ জোয়ারের পানির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইতিপূর্বে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল-সংলগ্ন মংলা ও রামপাল উপজেলার ৩২টি খালের
দুই শতাধিক অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করেছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি ওই সব খালে আবার বাঁধ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগের তালিকাভুক্ত ২৩টি খাল ও সেগুলোর শাখা-উপশাখাসহ মোট ৮২টি খাল চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি খতিয়ানভুক্ত এসব খালের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সেখানে স্থাপিত সব অবৈধ বাঁধ অপসারণ না করা পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।