ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফের ফাটল, ভাঙন আতঙ্ক

ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোলা অংশের চডারমাথা এলাকার ভাঙনকবলিত অংশে বালুভর্তি জিওটেক্স বস্তা ফেলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা ছবি l প্রথম আলো
ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোলা অংশের চডারমাথা এলাকার ভাঙনকবলিত অংশে বালুভর্তি জিওটেক্স বস্তা ফেলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা ছবি l প্রথম আলো

অব্যাহত নদীভাঙনের কারণে বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোলা অংশে আবারও ফাটল দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারায় ফেরিঘাটসহ সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠান ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে।
ভাঙনের শিকার ও হুমকিতে থাকা এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পাউবো একদিকে বালুভর্তি জিওটেক্সটাইলের বস্তা ফেলছে, অন্যদিকে তা স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর চডারমাথা দিয়ে বাঁধ ভেঙে গেলেই ভোলা সদর উপজেলা দুই ভাগে বিভক্ত হবে। এতে বাড়িঘর ও জমি হারাবেন লক্ষাধিক মানুষ। এর আগে গত ১৩ দিনে (২৫ জুলাই-৮ আগস্ট) মহাসড়ক, ফেরিঘাট, মাছঘাট, বাজার, মসজিদ ও শতাধিক ঘরবাড়িসহ কয়েক শ একর ফসলি জমি ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোলা সদর উপজেলার চডারমাথা এলাকার দক্ষিণে বাঁধের মাঝ বরাবর প্রায় ৩০০ ফুট ফাটল ধরেছে। এর পূর্ব পাশে মেঘনাতীরের ৩০-৪০ ফুটসহ মহাসড়ক রক্ষা বাঁধ একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। বালুভর্তি জিওটেক্সটাইল বস্তা ফেলার পর তা ভেসে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে চডারমাথা থেকে উত্তরে ইলিশা ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার মহাসড়কের অনেকাংশ মেঘনায় বিলীন হওয়ায় ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এরপরে পাউবো বালির বস্তা ফেলা শুরু করে। পাউবোর তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারা ৩৩ হাজার ৬০০ বস্তা ফেলেছে।
ইলিশা ইউনিয়নের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম, দক্ষিণ রাজাপুরের আমির হোসেনসহ কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, পাউবো ভুল প্রক্রিয়ায় বস্তা ফেলছে, ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না। ফলে ইলিশা, রাজাপুর, পশ্চিম ইলিশা ও বাপ্তার লক্ষাধিক মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ভোলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মো. শাজাহান বলেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়। চালু হয় বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ফেরিঘাট চালুর সময়ই আশপাশের তিন-চার কিলোমিটার এলাকায় ব্লক ফেলে বাঁধ দেওয়া উচিত ছিল।
উত্তর রাজাপুরের উন্নয়নকর্মী আফজাল হোসেন চৌধুরী বলেন, গত কয়েক বছরে উত্তর রাজারপুর যখন ভেঙে যায়, তখন ওই এলাকা পাউবোর কর্ম এলাকার অধীনে (পোল্ডারভুক্ত) নয় বলে তা প্রতিরোধে অবহেলা করে। উত্তর রাজাপুর বিলীন হওয়ার পরে উত্তর মেঘনা থেকে আসা উজানের পানি এখন সরাসরি দক্ষিণ রাজাপুরে আঘাত করছে। ব্লক ছাড়া এ ভাঙন ঠেকানো কঠিন।
ভোলা স্বার্থরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অমিতাভ অপু বলেন, ‘ফেরিঘাট যখন চালু হয়, তখন ঘাট থেকে বর্তমান ধসে যাওয়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ছিল প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। সড়ক ও ফেরিঘাট বারবার ভেঙেছে, বারবার অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক শ একর জমি, সহস্রাধিক বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। পাউবো ও সড়ক বিভাগ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে, কাজের কাজ কিছু হবে বলে মনে হয় না। এ জন্য দরকার স্থায়ী ব্যবস্থা।’
এ বিষয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হেকীম বলেন, গত ২৫ জুলাই থেকে মেঘনার তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ভেঙে গেছে। বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। কাজে কোনো অবহেলা নেই।