কিসের আবার ভীমরতি ধরল!

‘আপনাকে একজন ভদ্রলোক বলেই জানতাম। ভদ্রলোকের এক কথা। আপনি বলেছিলেন আপনি জীবনে বিয়ে করবেন না। সে জন্যই আমরা আনন্দচিত্তে আপনাকে আমাদের সংগঠনের সদস্য পদ দিয়েছিলাম। একই সঙ্গে কার্যকরী কমিটির দপ্তর সম্পাদকও নির্বাচিত করেছিলাম। আপনি এত বড় পদে থেকে বিয়ে করলেন, আমাদের আর মান ইজ্জত রইল না। ছিলেন তো ভালোই, কীসের আবার ভীমরতি ধরল (সুখে থাকলে ভুতে কিলায়) ? বুঝবেন ঠেলাটা পরে, মনে রাইখেন।...মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে আপনার শপথের কথা ভুলে গেলেন? আমাদের কথা ভুলে গেলেন? আপনার আদর্শের কথা ভুলে গেলেন? যাক ভবিষ্যতে আমাদের সংগঠনের নতুন সদস্য করতে আমরা আরও সাবধানী হব।’

এ কথাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে একটি বহিষ্কারপত্র। আর সেটা দেওয়া হচ্ছে কুমিল্লা চিরকুমার সমিতির দপ্তর সম্পাদক রতন মজুমদারকে (৩৭)। ‘শপথ ভেঙে’ বিয়ে করছেন বলে সংগঠন থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। সমিতির সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল ওরফে বাবলু প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত বছরের ৩১ অক্টোবর চিরকুমার সমিতির উপদেষ্টা রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক একই কারণে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চিরকুমার সমিতির দপ্তর সম্পাদক রতন মজুমদার বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে চিরকুমার সমিতির সদস্য হই। এরপর ওই সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হই। গত চার বছরে আমার বাবা ও মা গত হয়েছেন। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। প্রত্যেকে আলাদা হয়ে যাওয়ায় এখন আমার দেখভাল করার কেউ নেই। এ অবস্থায় বিয়ে ছাড়া আমার কোনো গতি নেই। আবেগে পড়ে তখন এ সমিতির সদস্য হয়েছিলাম। এখন বহিষ্কারাদেশ মেনে নিয়েছি।’

চিরকুমার সমিতি থেকে দপ্তর সম্পাদককে বহিষ্কার করলেও বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন সমিতির সদস্যরা। সোমবার রাত আটটায় বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁরা উপস্থিত থাকবেন। ওই সময়ে তাঁরা রতন মজুমদারকে বহিষ্কারাদেশ পত্র তুলে দেবেন। একই সঙ্গে কনেকেও ওই পত্রের অনুলিপি হস্তান্তর করা হবে।

এ প্রসঙ্গে চিরকুমার সমিতির সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল বলেন, ১৯৯৮ সালে ৬৫ জন সদস্য দিয়ে সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে এর নাম ‘কৃষ্ণকলি’ ছিল। পরে নাম পরিবর্তন করে চিরকুমার সমিতি করা হয়। গত কয়েক বছরে সংগঠনের ২৫ জন সদস্য বিয়ে করেছেন। কেউ কেউ মারা গেছেন। আবার কেউ না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেছেন। বর্তমানে তাঁরা কয়েকজন সংগঠনের হাল ধরে আছেন।