বঙ্গবন্ধুর নাম করে একদল চাঁদাবাজি করে: ড. কামাল

জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেনসহ অতিথিরা। ছবি: ফোকাস বাংলা
জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেনসহ অতিথিরা। ছবি: ফোকাস বাংলা

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি ছিল মানুষের জন্য। তিনি টাকার কাছে বিক্রি হননি। কিন্তু এখন একদল লোক শুধু ‘লীগ লীগ’ করে। বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি দাবি করে তারা চাঁদাবাজি ও ধান্ধাবাজি করে।

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় কামাল হোসেন এ কথা বলেন। গণফোরাম আয়োজিত এ সভায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্য, তাঁর আদর্শ থেকে নেওয়া শিক্ষা ও লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য দেন। পাশাপাশি বর্তমান সময়ে বঙ্গবন্ধুর গড়া দলের রাজনৈতিক অবক্ষয় এবং বর্তমান সরকারের নানা ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেন।

কামাল হোসেন দেশের টাকা লুটপাট করে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি কেনার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা কোনো দিন এই চিন্তা করিনি। দেশের মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “গরু-ছাগলের মাথা বিক্রি হয়। মানুষের মাথা বিক্রি হয় না। আমরা টাকার কাছে বিক্রি হব না। ” এখন একদল শুধু লীগ লীগ করে। বঙ্গবন্ধুর নাম করে, তাঁর উত্তরসূরি দাবি করে চাঁদাবাজি ও ধান্ধাবাজি করে।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কি এঁদের প্রশ্রয় দিতেন? তিনি কি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জমি দখলের পর দখলকারীদের পিঠ চাপড়াতেন? বঙ্গবন্ধু কি গুন্ডাদের সর্দার ছিলেন? ’
বঙ্গবন্ধু আদর্শের রাজনীতি করেছেন—উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, এখন যারা ‘লীগ লীগ’ করছে, তারা বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি হিসেবে পরিচয় দেওয়ার অধিকার রাখে কি না এমন প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, চাঁদাবাজ ও ধান্দাবাজদের ষাটের দশকে বলা হতো ‘গুন্ডা’। এঁদের জন্য গুন্ডা আইন হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘গুলি করে, পুলিশের ভয় দেখিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করা যাবে না। কারণ বঙ্গবন্ধু আমাদের মুখ খুলে দিয়েছেন। নিজে দুই নম্বরি না করলে, অসৎভাবে কিছু অর্জন না করলে এবং বাড়ি দখল না করলে কোনো ভয় নেই। ১৬ কোটি মানুষের জন্য গুলি, গ্রেনেড এবং কারাগারও নেই।’
দেশে অনৈক্য বা বিভক্তি আছে—এমন কথা না বলার জন্য সহকর্মী ও সহযোদ্ধাদের অনুরোধ করে কামাল হোসেন বলেন, দেশের জনগণ লুটপাটের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে ঐক্যবদ্ধ করে দিয়ে গেছেন। এরপর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ২৪টি পেশাজীবী সংগঠন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে তাঁকে আত্মসমর্পণ করিয়েছে। এ পর্যায়ে কামাল হোসেন মঞ্চে বসা আলোচক ও সামনের দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন ছোড়েন, ‘ভয় পেয়ে, বিভক্তির কথা বলে আমরা কি বোবা হয়ে, নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকব? ’
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, চারদিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলা হচ্ছে। অথচ যে এইচ টি ইমাম বিশ্বাসঘাতক মোশতাক সরকারের শপথ পড়িয়েছিলেন, তিনিই এখন বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ফারুক-রশিদের পৃষ্ঠপোষকতাকারী এইচ এম এরশাদ এখন সরকারের বিশেষ দূত এবং তাঁর দল ক্ষমতার অংশীদার।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন গণফোরামের নেতা সুব্রত চৌধুরী, মফিজুল ইসলাম খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, ফরোয়ার্ড পার্টির মোস্তফা আমীন প্রমুখ।