মাইকিংয়েও কাজ হচ্ছে না

মানাস নদে বাঁশের চাঁই দিয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে মাছ ধরা হচ্ছে। ছবিটি গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়রুপাই এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো
মানাস নদে বাঁশের চাঁই দিয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে মাছ ধরা হচ্ছে। ছবিটি গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়রুপাই এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় গজঘণ্টা এলাকা থেকে কাউনিয়া উপজেলার বালারঘাট পর্যন্ত মানাস নদের পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে ৫০টির বেশি বাঁশের চাটাই দিয়ে এ বছরও বেড়া দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মাছ শিকার করতে এসব বাঁশের চাটাই দিয়ে বাঁধ তৈরি করেছেন।
নদের পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে মাছ শিকার না করার জন্য এসব বাঁধ সরিয়ে নিতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করা হলেও কাজ হয়নি। এরপর অনেককে চিঠিও দেওয়া হয়। কিন্তু বেড়া দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ হয়নি।
সরেজমিনে গতকাল রোববার দেখা গেছে, প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আনুমানিক ৫০টির অধিক বাঁশের চাটাই দিয়ে বেড়া দিয়ে মানাস নদে মাছ শিকার চলছে। নদটি প্রস্থে ৮০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত। নদ গজঘণ্টা বাজার এলাকা থেকে তিস্তার শাখা থেকে উৎপত্তি হয়ে কাউনিয়ার বালারঘাট এলাকা পর্যন্ত গিয়ে পুনরায় তিস্তা নদীতে মিলেছে। নদের গুলালগুদাই, কইপাড়া, বকশা, হৈরম্মল, বড় রুপাই, গজঘণ্টা, কাগজিপাড়া, মৌভাষাসহ আটটি গ্রামের অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ বেড়া দিয়ে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিবছরই নদে এভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা স্থানীয় প্রশাসন এসব বাঁধ স্থাপনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এতে নদের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। তাঁরা জানান, নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ করে এভাবে মাছ ধরছেন গুলালগুদাই এলাকার আল আমিন, কইপাড়া এলাকার আবুল কালাম, বকশা এলাকায় লাল মিয়া, আবদুলাহেল, সাইদুল ইসলাম, আবুজার রহমান, হৈরম্মল এলাকার দুলাল মিয়া, বড় রুপাই এলাকায় ফজলু মিয়া, আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ।
কথা হয় তাঁদের অনেকের সঙ্গেই। গুলালগুদাই গ্রামের আল আমিন স্বীকার করেন, ‘এই সময় প্রতিবছরই নদীতে (নদ) আড়াআড়িভাবে বাঁশের চাটাই দিয়া মাছ ধরে থাকি। এতে তো কারও কোনো অসুবিধা হইতছে না।’
মৌভাষা গ্রামের কৃষক আনোয়ার মিয়া জানান, পুরো মানাস নদটি যেন দখল হয়ে গেছে। এই নদে কেউ নামতেও পারেন না।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল কবির জানান, নদীতে বেড়া দিয়ে মাছ ধরা নিষেধ। এভাবে মাছ না ধরতে এলাকায় মাইকযোগে প্রচার চালানো হয়। সেই সঙ্গে অনেককেই চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এরপরও কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই খুব শিগগির অভিযান চালানো হবে। তিনি আরও জানান, এভাবে মাছ ধরা হলে মাছের বংশবৃদ্ধি কমে যায়। এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
গজঘণ্টা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, নদের পাশ ঘেঁষে যাদের বাড়ি, তারাই নদীতে বেড়া দিয়ে প্রতিবছরই মাছ ধরে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নদের মধ্যে বেড়া দিয়ে কেউ মাছ ধরতে পারেন না। বিষয়টি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।