চাঁদা না পেয়ে কচুয়ার স্কুলে যুবলীগ কর্মীদের হামলা

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ভূঁইয়ারা উচ্চবিদ্যালয়ে যুবলীগ কর্মীদের হামলায় গতকাল রোববার অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য যুবলীগ কর্মীদের চাঁদা না দেওয়ায় ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও ভূঁইয়ারা উচ্চবিদ্যালয় সূত্র বলেছে, স্থানীয় যুবলীগ কর্মী ফারুক, লিটন, মনিরসহ একদল যুবক শুক্রবার রাতে বিদ্যালয়ে এসে ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠানের জন্য ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় তাঁরা প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র সরকার ও সহকারী শিক্ষক ফজলুর রহমানকে লাঞ্ছিত করেন। এর জের ধরে শনিবার রাত ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের কিছু শিক্ষার্থী ফারুক ও মনিরের বাড়িতে হামলা চালায়। এরপর দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে গতকাল সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের ভেতরে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় ফারুক, লিটন ও মনিরের নেতৃত্বে ১৫-২০ যুবক লাঠিসোঁটা ও দা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। এতে অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী আহত হয়।
আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার, বিউটি আক্তার, শাবনুর, আরিফ হোসেন, পাখি আক্তার, সুজন, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার, পপি আক্তার, রিপা আক্তার, খাদিজা আক্তার, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিলা আক্তার, সায়মা আক্তার, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার, মীম ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিজা আক্তারসহ ২৫ জনকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক বিজয় দত্ত বলেন, ১৭ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি রাখা হয়েছে। দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর গুরুতর আহত ছয়জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
গতকাল রাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, আহত শিক্ষার্থীরা কান্নাকাটি করছে। তাদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক ইউসুফ হোসেন ঢাকা থেকে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটা বর্বর, ন্যক্কারজনক। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
এএসপি মো. আবদুল হানিফ (হাজীগঞ্জ সার্কেল) গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, কুমিল্লা মেডিকেলে স্থানান্তর করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুজন নামের একজনের পায়ে ২৬টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। আর সোনিয়ার মাথায় গুরুতর জখম আছে। তিনি আরও বলেন, হামলার ঘটনায় লিটনের ভাই মোজাম্মেলকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলাকারীরা উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিনের অনুসারী। হেলাল উদ্দিন বর্তমানে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। ঘটনার পর থেকে ফারুক, লিটন ও মনির পলাতক থাকায় তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় ফারুক, লিটন ও মনির তাঁকে ও সহকারী শিক্ষক ফজলুল হককে লাঞ্ছিত করে। গতকাল তারা বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মুবিন বলেন, ‘শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি হেলাল উদ্দিনকে জানিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, মীমাংসা করে দেবেন। এর মধ্যেই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হলো।’
উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন বলেন, ওই দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় শনিবার রাতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফারুক ও মনিরের ঘর ভাঙচুর করে। এর জের ধরে গতকাল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে হামলাকারীরা যুবলীগের কেউ নন।
কচুয়া থানার ওসি ইব্রাহিম খলিল বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।