ওদের খাতায়-তুলিতে বঙ্গবন্ধু

ব্রেইল খাতায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা লিখছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা। চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে গতকাল দৃষ্টি ও বাক্প্রতিবন্ধী শিশুরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় l ছবি: প্রথম আলো
ব্রেইল খাতায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা লিখছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা। চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে গতকাল দৃষ্টি ও বাক্প্রতিবন্ধী শিশুরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় l ছবি: প্রথম আলো

হাতে ছোট একটি পিন। তা দিয়ে টুকটুক করে মোটা একটি পৃষ্ঠা ছিদ্র করে যাচ্ছে দৃষ্টিহীন এক শিশু। কয়েকটি ছিদ্র মিলে তৈরি হচ্ছে একটি বর্ণ। একটি বর্ণের পাশে আরেকটি বর্ণ বসিয়ে বানানো হচ্ছে শব্দ। একটির পর একটি শব্দ জুড়ে সৃষ্টি করছে বাক্য। এ রকম কয়েকটি বাক্য মিলে তৈরি হচ্ছে একটি রচনা। এই রচনার নাম ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ।’
চট্টগ্রাম নগরের সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে গতকাল রোববার বিকেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণও শোনায় তারা। শুধু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাই নয়, এই আয়োজনে ছিল বাকপ্রতিবন্ধী শিশুরাও। মুখে ভাষা না থাকলেও রংতুলির আঁচড়ে তারা ফুটিয়ে তোলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখাবয়ব। স্রোত নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
প্রথম থেকে দশম শ্রেণির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্রেইল পদ্ধতিতে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আসমা আক্তার লিখেছে, ‘এক অন্ধকার সময়ে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন আলোকরশ্মি হয়ে। তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন।’
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মো. ফরিদ লিখেছে, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলেও তাঁর চেতনাকে মুছে ফেলা যায়নি।’
তৃতীয় শ্রেণির নার্গিস আক্তারের কাছে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলে, তিনি আমাদের স্থপতি। তিনিই এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন।
সপ্তম শ্রেণির আনিকা তাহসিন শ্রেণিকক্ষে বসে রচনা লিখছিল। শিশুটির মা শাকেরা বেগম বলেন, ‘মেয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে, এটা ভালোই লাগছে। সে হাসিখুশি থাকলে শান্তি পাই।’ রচনা প্রতিযোগিতা শেষ করে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা ৭ মার্চের ভাষণ শোনানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল দশম শ্রেণির হিমেল কান্তি দে। সে জানায়, ছোটবেলা থেকেই­ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেছে।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন শহর সমাজ সেবা প্রকল্পের কর্মকর্তা অভিজিৎ সাহা। উপস্থিত ছিলেন সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ, শিক্ষক মোখলেসুর রহমান, স্রোতের সভাপতি শুভাশীষ চৌধুরী প্রমুখ।
রচনা প্রতিযোগিতা ক বিভাগে (প্রথম-পঞ্চম) মরিয়ম আক্তার প্রথম, আজাদ রহমান দ্বিতীয় ও নার্গিস আক্তার তৃতীয় হয়। খ বিভাগে (ষষ্ঠ-দশম) মো. ফরিদ, মো. হাসানুজ্জামান ও রিপা আক্তার যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়। ভাষণ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় রাহী জী চৌধুরী। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয় যথাক্রমে মো. হাসানুজ্জামান ও মো. ফরিদ। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় সেরা তিনটি পুরস্কার পায় যথাক্রমে রাশেদুল ইসলাম, আশিকুর রহমান ও মো. শহীদ।