বাধা ডিঙানোর পথেও বাধা

চার-পাঁচ বছর আগেই দ্বিতল ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বৃষ্টি হলেই পানিতে থই থই করে নিচতলা। দ্বিতীয় তলার দেয়াল ও ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। খসে গেছে পলেস্তারা। তবু ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলে। চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরের সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এবং সরকারি বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের এমন দুর্দশা কয়েক বছর ধরেই।
শুধু বিদ্যালয় ভবন নয়, প্রতিবন্ধী এই শিশুদের আবাসন ভবনের অবস্থাও নাজুক। এতে সারাক্ষণই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে থাকতে হচ্ছে এই শিক্ষার্থীদের। বর্তমানে ৬৮ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং ৫০ জন বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পড়ছে এ দুটি বিদ্যালয়ে। একই ভবনে দৃষ্টি এবং বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের দুটি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আগে বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের পাঠদান হতো নিচতলায়। বছর দুয়েক আগে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয় দোতলায়। সেখানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি তাদেরও পাঠদান হয়।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ বলেন, ‘পরিত্যক্ত ভবনে খুব নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা বাচ্চাদের পড়াই।’
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের নিচতলায় পানি জমে থাকায় দোতলার সিঁড়িতে ওঠার জন্য বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি ইট ফেলা হয়েছে। দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের কেউ ইটের ওপর পা ফেলে কেউবা পানিতে পা ডুবিয়েই শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থী মো. ফরিদ বলে, ক্লাস করতে ভয় লাগে। হোস্টেলের অবস্থাও খারাপ। আরেক শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান জানায়, নিচতলায় পানি আর কাদামাটির মধ্যে পোকা, জোঁক থাকে। ক্লাসে যেতে ভয় লাগে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, আগে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা দুটি ছাত্রাবাসে রাখা হতো। কিন্তু ঝুঁকির কারণে ছাত্রীদেরও মাস খানেক আগে ছাত্রদের আবাসিক ভবনের তৃতীয় তলায় এনে রাখা হয়। হোস্টেল ভবনটির নিচতলায় বাক্প্রতিবন্ধী ছাত্ররা থাকে। দ্বিতীয় তলায় থাকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্ররা। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আবাসিক ছাত্রছাত্রী মোট ৪৮ জন, আর বাক্প্রতিবন্ধী আবাসিক শিক্ষার্থী ৩০ জন।
বিদ্যালয় দুটি পরিচালনার দায়িত্ব সমাজসেবা অধিদপ্তরের। মোট ২ দশমিক ৬৬ একর জায়গায় বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোট ছয়টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ভবনই পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা অভিজিৎ সাহা জানান, ষাটের দশকে এই ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও নিরুপায় হয়ে সেখানে পাঠদান চলছে। তিনি বলেন, পাঁচটি ভবন ভেঙে নতুন করে নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। আগামী অর্থবছরে তিনটি নতুন ভবনের কাজ শুরু করার আশা করছেন তাঁরা।