গাছ লুটে নিলেন যুবলীগ নেতারা

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বুধহাটা-ব্যাংকদহ সড়কের মাঝিরপাড়া অংশ থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবিগুলো গত শুক্রবার তোলা l প্রথম আলো
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বুধহাটা-ব্যাংকদহ সড়কের মাঝিরপাড়া অংশ থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবিগুলো গত শুক্রবার তোলা l প্রথম আলো

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কের পাশ থেকে ১৮টি কড়ই (রোড শিশু) গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। গত ১০ দিনে চার দফায় যুবলীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে এসব গাছ কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার (জরিপকারক) হাসানুজ্জামান আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে এসব গাছ কাটতে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে সার্ভেয়ার হাসানুজ্জামান বলেন, তিনি দুটি গাছ জব্দ করেছেন। এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন তিনি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী বরাবর জমা দিয়েছেন। আর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. মানিরুজ্জামান বলেন, গাছ কাটা সম্পর্কে তাঁকে কেউ জানাননি। কোনো প্রতিবেদনও তাঁর কাছে আসেনি। এ ব্যাপারে তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা সদরের জোড়দিয়া-চাঁদপুর সড়কের ঝিফুলবাড়ি, বুধহাটা-ব্যাংকদহ সড়কের মাঝিরপাড়া ও চাঁদপুর-জোড়দিয়া সড়কের জোড়দিয়া এলাকা থেকে জেলা পরিষদের এসব গাছ কাটা হয়েছে। গাছের গোড়াগুলো সেখানে পড়ে আছে। কয়েকটি গাছের গুঁড়ি ব্যাংকদহ বাজার এলাকায় একটি করাতকলের পাশে ব্যাংকদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের পাশে রাখা আছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ৮ ও ৯ আগস্ট ঝিফুলবাড়ি এলাকা থেকে কাটা হয়েছে নয়টি, ১৪ আগস্ট মাঝিরপাড়া এলাকা থেকে কাটা হয়েছে ছয়টি ও ১৫ আগস্ট জোড়দিয়া এলাকা থেকে তিনটি গাছ কাটা হয়েছে। ১৪ আগস্ট কাটা গাছগুলোর মধ্যে জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার দুটি ও ১৫ আগস্ট পুলিশ একটি গাছ জব্দ করেছে।
ফিংড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মহিলা সদস্য (৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড) আঞ্জুমানারা বলেন, ৮ ও ৯ আগস্ট ফিংড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সোহাগ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল হোসেনের নেতৃত্বে ঝিফুলবাড়ি এলাকার নয়টি বড় কড়ইগাছ কাটা হয়। সে সময় সেখানে জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার হাসানুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি যুবলীগের নেতাদের কাছে গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, জেলা পরিষদ থেকে তাঁদের গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সার্ভেয়ার উপস্থিত থাকায় তিনি তা বিশ্বাসও করেন। ১৫ আগস্ট জোড়দিয়া কালভার্ট এলাকায় গিয়ে তিনি দেখতে পান, ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে দুটি বড় ও একটি মাঝারি আকৃতির গাছ কাটা হয়েছে। এরপর তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে একটি গাছ জব্দ করে।
ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশরাফুজ্জামান বলেন, ৮ ও ৯ আগস্ট কাটা হয় নয়টি গাছ। গাছগুলো এক কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এসব গাছ ফিংড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সোহাগ হোসেন, সহসভাপতি আবদুল মান্নান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে কাটা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই তিনজন দাবি করছেন গাছ কাটায় জেলা পরিষদের অনুমতি রয়েছে।

ব্যাংকদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের পাশে রাখা কয়েকটি গাছের গুঁড়ি । ছবিগুলো গত শুক্রবার তোলা l প্রথম আলো
ব্যাংকদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের পাশে রাখা কয়েকটি গাছের গুঁড়ি । ছবিগুলো গত শুক্রবার তোলা l প্রথম আলো


অবশ্য সোহাগ হোসেন বলেন, গাছ কেটেছেন আরিফুল। তিনি তাঁর সঙ্গে ছিলেন মাত্র। তাঁদের গাছ কাটার জন্য জেলা পরিষদের প্রশাসক মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছিলেন। গাছ কাটার কথা অস্বীকার করে আবদুল মান্নান বলেন, ‘ভাই, পরে কথা বলছি।’ এরপর মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।
কাঠ ব্যবসায়ী জোড়দিয়া গ্রামের রেজাউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, তিনি তিন হাজার টাকায় সোহাগ, আরিফুল ও মান্নানের কাছ থেকে মোট ৩০ মণ জ্বালানি কাঠ কিনেছেন। ব্যাংকদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ফেলে রাখা গাছের গুঁড়িগুলো কার—প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ওগুলো তাঁকে কেনার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি গাছ, ঝামেলা হতে পারে বলে তিনি কেনেননি।
জেলা পরিষদের প্রশাসক ও সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ বলেন, তিনি কাউকে গাছ কাটার অনুমতি দেননি। যুবলীগের সদস্য হোক আর অন্য যে কেউ হোক, গাছ যাঁরা কেটেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।