ঘরে বসেই কিডনি রোগের চিকিৎসা

কিডনি অকেজো হয়ে গেছে এমন রোগীদের চিকিৎসায় এখন বিশ্বে সিএপিডি (কন্টিনিউয়াস এমবুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস) জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা ঘরে বসেই নেওয়া যায় এবং রোগী তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারেন। তাঁকে কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতালে ছুটতে হয় না। বাংলাদেশে এই পদ্ধতিটি জনপ্রিয় করতে চায় কিডনি ফাউন্ডেশন।
গতকাল মঙ্গলবার কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ কথা জানানো হয়।
সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশে এখনো অধিকাংশ কিডনি রোগী হাসপাতালে গিয়ে যন্ত্রের সাহায্য রক্ত পরিশোধন (ডায়ালাইসিস) করেন। সিএপিডি পদ্ধতির ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা রোগীর পেটের ভেতর ছিদ্র করে বাইরে থেকে একটি ব্যাগ যুক্ত করে দেন, যা ফ্লুইডের মাধ্যমে রক্ত পরিশোধনের কাজ করে। পরে রোগী নিজের ঘরে থেকে শুধু ফ্লুইড দিয়ে এই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, একজন কিডনি অকেজো রোগী যন্ত্রের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস করে যত দিন বাঁচেন, সিএপিডি করে একই সময় বা তাঁরও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারেন।
সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতিবছর ধীরগতিতে কিডনি অকেজো হয় প্রায় ৩৫ হাজার লোকের। দেশের ২৯টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ১৩টিতে কিডনি রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। বেসরকারি খাতে ৮৬টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। হেমোডায়ালাইসিস, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন হলো কিডনি অকেজো রোগের চিকিৎসা। বর্তমানে সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৯৫টি হেমোডায়ালাইসিস ও ১০টি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে।
সেমিনারে আরও বলা হয়, মেক্সিকো ও হংকংয়ে ৮০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ শতাংশ কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া রোগীর ডায়ালাইসিস সিএসপিডির মাধ্যমে হচ্ছে।
কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এম হারুন আর রশিদ বলেন, সিএপিডির সুবিধা হচ্ছে এ পদ্ধতিতে রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, ঘন ঘন রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না এবং রোগীরা বেশ উৎফুল্ল বোধ করেন।
ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান বলেন, সিএপিডিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে মূল সমস্যা এর ফ্লুইড বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফ্লুইডের ওপর যে কর আছে তা সরকারকে তুলে নিতে হবে, নইলে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফ্লুইড উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, কিডনি বিশেষজ্ঞ জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ফিরোজ খান, শামীম আহমেদ, শহিদুল ইসলাম সেলিম, আইয়ুব আলী চৌধুরী, নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, আছিয়া খানম প্রমুখ।