উখিয়ার চেনছড়ি অরণ্যে বঙ্গবন্ধু

১৯৫৮ সালে উখিয়ার চেনছড়ি অরণ্যের এই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৪ আগস্ট এই স্থানে স্থাপন করা হয় স্মৃতিফলক l প্রথম আলো
১৯৫৮ সালে উখিয়ার চেনছড়ি অরণ্যের এই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৪ আগস্ট এই স্থানে স্থাপন করা হয় স্মৃতিফলক l প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সমুদ্র উপকূলের অরণ্যঘেরা একটি গ্রাম চেনছড়ি। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসনের সময় অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই চেনছড়ি অরণ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কাটিয়েছেন কয়েকটা দিন। দীর্ঘ ৫৭ বছর পর বঙ্গবন্ধুর অজ্ঞাতবাসের স্থানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
উখিয়ার ইনানী থেকে চেনছড়ির দূরত্ব দুই কিলোমিটার। সংরক্ষিত বনের পাশেই পাহাড়ে ঘেরা চেনছড়ি গ্রাম। গ্রামে আটটি চাকমা পরিবারের বসবাস। বঙ্গবন্ধু ওই গ্রামে গেলে সে সময়কার চাকমা নেতা ফেলোরাম রোয়াজা বঙ্গবন্ধুকে অতিথি হিসেবে বরণ করেছিলেন। থাকতে দিয়েছিলেন নিজের মাচাং ঘরে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ফেলোরামের সেই ভিটা সংরক্ষণের আওতায় আসছে। এ জন্য ১৪ আগস্ট চেনছড়ি অরণ্যে বঙ্গবন্ধুর ‘স্মৃতি বিজড়িত সংরক্ষিত স্থান’ শিরোনামে একটি স্মৃতিফলক টাঙানো হয়।
চেনছড়িতে গেলে কথা হয় ফেলোরামের বংশধর রবিঅং চাকমার সঙ্গে। স্মৃতিফলক দেখে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি এই ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ছোট্ট এই গ্রামে বঙ্গবন্ধুর বহু গল্প এখনো লোক মুখে ফেরে। বঙ্গবন্ধুকে ভাত রান্না করে দিতেন গ্রামেরই এক মুসলিম নারী সখিনা খাতুন। কয়েক বছর আগে সেই নারী মারা যান। তিনি শুনেছেন, সন্দ্বীপের আওয়ামী লীগ নেতা আছদ আলী বলীর সাম্পানে করে বঙ্গবন্ধু প্রথমে মহেশখালী ও পরে সোনাদিয়ায় আসেন। এরপর ইনানী উপকূলে আসেন তিনি। সেখান থেকে এই গ্রামে আশ্রয় নেন। বঙ্গবন্ধুকে সেই সময় কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল সোনারপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হাকিম ও আবদুল খালেকের। তাঁরা বলেন, ‘জাতির পিতার সেই স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর গড়ে তোলা দরকার। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই দাবি করে আসছি।’
১৪ আগস্ট চেনছড়ি অরণ্যে স্মৃতিফলক স্থাপন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাংসদ জাহেদ আহসান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব নূর মোহাম্মদ, কক্সবাজারের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অনুপম সাহা, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহান, হিন্দু বৌদ্ধ ট্রাস্টি বের্ডের সদস্য সুপ্ত বড়ুয়া, কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী, জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে এই ঐতিহাসিক স্থানটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। জাতির জনকের স্মৃতিধন্য এ স্থানে গড়ে তোলা হবে ‘বঙ্গবন্ধু’ মিউজিয়ামসহ আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র।