ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ

প্লাবন ও টানা বৃষ্টিতে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার পুকুরগুলো ভেসে গেছে। এতে মৎ​স্যচা​িষরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শৌখিন মৎস্য শিকা​িরদের যেন লেগেছে উৎ​সব। ছবিটি গতকাল দুপুরে লালমসজিদ গ্রামের মানাসপাড় দোলা থেকে তোলা l প্রথম আলো
প্লাবন ও টানা বৃষ্টিতে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার পুকুরগুলো ভেসে গেছে। এতে মৎ​স্যচা​িষরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শৌখিন মৎস্য শিকা​িরদের যেন লেগেছে উৎ​সব। ছবিটি গতকাল দুপুরে লালমসজিদ গ্রামের মানাসপাড় দোলা থেকে তোলা l প্রথম আলো

কয়েক দিনের টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় অন্তত সাড়ে ১৭ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে উপজেলার মোট আবাদি আমন খেতের প্রায় অর্ধেক। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৪০ গ্রামের অন্তত ২৫ হাজার মানুষ।
সরেজমিন গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের নিজদরপা, হরিচরণ, লালমসজিদ ও তেলীপাড়া গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, এসব গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।
নিজদরপা গ্রামের ইদ্রিস আলী (৪৫) বলেন, ‘কয়দিন খুব রইদ (রোদ) গেল। হঠাৎ দুই দিন আগোত ঘরবাড়ি তলে গেইচে। এ্যালা থাকারও জাগা নাই। ছইল-পইল নিয়া স্কুলোত আছি।’
লালমসজিদ গ্রামের গৃহবধূ আকলিমা খাতুন (৪২) বলেন, ‘দুই দিন থাকি খাবার নাই। কাজকাম কইরবার পাওচি না।’
টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলিম উদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় বাড়িঘরে পানি ওঠায় গরিব মানুষ কষ্টে আছে। তারা আমার বাড়িতে ও পরিষদে সরকারি সাহায্যের আশায় ভিড় করছেন। কিন্তু বরাদ্দ না পাওয়ায় তাঁদের সহযোগিতা করতে পারিনি।’
এদিকে আকস্মিক প্লাবনে উপজেলার মৎস্যচাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই উপজেলায় ১ হাজার ৮৯৬টি পুকুর রয়েছে। এসব পুকুরের মৎস্যচাষিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী এসব পুকুরের মধ্যে ১ হাজার ৩৭১টি থেকে ১৭ কোটি ৩১ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। সূত্রটি আরও জানায়, উপজেলায় পোনা মাছচাষি আছেন ২৭ জন। তাঁদের মোট ৪০ লাখ ৮০ হাজার পোনামাছ ভেসে গেছে। এতে তাঁদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
উপজেলার হরিশ্বর বালাপাড়া গ্রামের পোনামাছ চাষি শাহ্ আলম (৩২) বলেন, ‘পাঁচ দিনের বর্ষণে আমার আটটি পুকুরের প্রায় ৯ লাখ টাকার ৭০০ কেজি পোনামাছ ভেসে গেছে। বন্যার কারণে পুঁজি যা ছিল সব শেষ।’
নিজপাড়া গ্রামের অলন্ত চন্দ্র রায় (৩৮) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘টাকা ঋণ নিয়া পোনা মাছের চাষ করছেনো। চারটি পুকুরের চার লাখ টাকার মাছ সউগ ভাসি গেইছে।’
পানিবন্দী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে চারদিকে ছড়িয়ে যাওয়ায় লোকজন বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে দল বেঁধে মাছ শিকার করছেন।
উপজেলার ৫ হাজার ১০০ হেক্টর আমন ও ৮০ হেক্টরের সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গেছে বলে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা বদরুল ইসলাম জানিয়েছেন। এবার উপজেলায় ১১ হাজার ২৬০ হেক্টরে আমন ও ২৮০ হেক্টরে সবজি চাষ করা হয়েছিল।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল আজিজ বলেন, অতিবর্ষণে উপজেলার হারাগাছ পৌরসভাসহ ছয় ইউনিয়নের ৪০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব দুর্গত মানুষের জন্য ২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত গত চার দিনে রংপুরসহ আশপাশের এলাকায় ৩৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। ডালিয়া ব্যারাজের উপসহকারী প্রকৌশলী আমিনুর ইসলাম বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে নদীতে স্রোতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় তিস্তা ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফরহাদ হোসেন জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে ২০ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। তবে গতকাল রোববার পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ৫ মেট্রিক টন চাল। এ চাল এখনো বিতরণ করা হয়নি।

 পানিবন্দী ২৫ হাজার মানুষ  ১৮০ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে