ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম স্থবির

পাঁচ বছর বয়সী ছেলের জন্মনিবন্ধনের জন্য পল্লবী থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়-২-এ এসেছেন মো. ফরহাদ। হিসাব শাখার এক কর্মচারী তাঁকে বলেছেন ৫০০ টাকা লাগবে। অথচ জন্মনিবন্ধনের কাজ করে থাকে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য শাখা। আর পাঁচ বছর বয়সী শিশুর সরকার-নির্ধারিত জন্মনিবন্ধন খরচ ৫০ টাকা।
এভাবে জন্মনিবন্ধন করাতে আসা লোকজনের কাছে নির্ধারিত খরচের চেয়ে বেশি টাকা দাবি করছেন আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিভিন্ন শাখার কিছু কর্মচারী ও দালাল। এ ছাড়া দিনের বেলা ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। কাজ চলছে রাতের বেলা।
গত বুধবার আঞ্চলিক কার্যালয়-২-এর মূল ভবনে প্রবেশ করতেই একজন নিজেকে সিটি করপোরেশনের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলেন, কিছু লাগবে কি না। দেড় বছর বয়সী এক শিশুর জন্মনিবন্ধন করাতে চাইলে বললেন ‘কাল এসে নিয়ে যাবেন। ২৫০ টাকা লাগবে।’
সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, দুই বছরের কম বয়সী শিশুর জন্মনিবন্ধনে টাকা লাগে না। দুই বছরের বেশি বয়সীদের প্রতি বছরের জন্য ১০ টাকা দিতে হয়। অর্থাৎ কারও বয়স ১০ বছর হলে তার ফি লাগবে ১০০ টাকা। অঞ্চল-২-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আগে শুনিনি। কোন কোন কর্মচারী জড়িত তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আঞ্চলিক কার্যালয়-২ ও ৪ ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন পরিষেবা নিতে আসা জনগণের জন্য নেই তথ্য-অনুসন্ধান কেন্দ্র। কোথায় কোন সেবা পাওয়া যায় তা জানতে লোকজন ভবনের সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের জিজ্ঞেস করছেন। এসব ব্যক্তিরাই বিভ্রান্ত করে বেশি টাকা দাবি করছেন।
স্থবির জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম: জন্মনিবন্ধনের সব কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে সম্পন্ন হয়। ডিএনসিসির তিনটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় এক মাস ধরে দিনের বেলা ইন্টারনেট-সংযোগ থাকে না। রাত সাতটা-আটটার দিকে ইন্টারনেট-সংযোগ এলেও তা অত্যন্ত ধীরগতির। ডিএনসিসির অঞ্চল-৫-এর (কারওয়ান বাজার) সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফিরোজ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিনের বেলায় ইন্টারনেট থাকে না, কাজ করব কীভাবে। কোনোভাবেই জরুরি নিবন্ধন দেওয়া সম্ভব না।’ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, যে কেউ জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে জন্মনিবন্ধন করাতে পারেন। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় সিটি করপোরেশন জরুরি জন্মনিবন্ধন দিতে পারছে না।
অঞ্চল-৪-এর সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহমুদা আলী বলেন, ‘জন্মনিবন্ধন নিতে আসা লোকজনকে ইন্টারনেট সংযোগ নেই বললে ভাবে হয়রানি করছি। কোনো কিছু সংশোধন করা যাচ্ছে না, পুরোনো তথ্য হালনাগাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।’