নাগর নদ ও চলনবিলে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার

নাটোরের সিংড়া উপজেলায় নাগর নদ ও চলনবিলে বানার বাঁধ দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নির্বিচারে মাছ শিকার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এতে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি তীরবর্তী এলাকার স্থাপনাও হুমকির মুখে পড়ছে। এলাকাবাসী এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, তাজপুর ইউনিয়নের নিলামপুর গ্রামে নাগর নদের এপার থেকে ওপারে বাঁধ দিয়ে বিত্তি (মাছ মারার ফাঁদ) পাতা হয়েছে। ছোট-বড় কোনো আকারের মাছই এই ফাঁদ এড়াতে পারছে না। এ ছাড়া বানায় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মাটি ধসে তীরবর্তী নিলামপুর জামে মসজিদসহ কয়েকটি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হতে বসেছে। এভাবে মাছ শিকারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ যুবলীগ কর্মী হেলাল উদ্দিন, আবদুল মতিন ও ধলু প্রাং। এলাকাবাসী বাধটি অপসারণে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সপ্তাহ খানেক আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ইউএনও এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিলে গত রোববার উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বানা অপসারণে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। কিন্তু গতকাল বুধবার পর্যন্ত তা অপসারণ করা হয়নি।
নিলামপুর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমান বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা বাঁধ দেওয়ার কাজে জড়িত। তাই প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে জোড়ালো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ইউপি চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘যাঁরা মাছ ধরছেন তাঁরা আমার দলের লোক, এটা ঠিক। তবে দলীয় পরিচয়ে তাঁরা মাছ ধরছেন না। আয়রোজগারের স্বার্থে মাছ ধরছেন। এতে যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। দল তাতে বাধা দেবে না।’
এদিকে উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নে চলনবিল এলাকা ঘুরে এখানেও বানার বাঁধ দিয়ে ছোট-বড় সব ধরনের মাছসহ কাঁকড়া ও শামুক পর্যন্ত নিধন করতে দেখা গেছে। ২৫ অক্টোবর সরেজমিনে দেখা গেছে, জলাশয়ের এক কিলোমিটারের বেশি অংশ বাঁধ দিয়ে ঘেরা। এটি এতটাই নিশ্ছিদ্র যে জলজ কীটপতঙ্গ পর্যন্ত আটকা পড়ছে।
বাঁধে ডাইড় পাতার কাজে ব্যস্ত হাসান আলী বলেন, ‘বিলের মাছ মেরে না খেলে বাঁচব কী করে? তবে আমি তো একা এ কাজ করি না। এর সঙ্গে এলাকার বড় বড় মানুষও জড়িত।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন শিক্ষক বলেন, বিশাল এই বাঁধ থেকে যে আয় হয় তার ভাগ স্থানীয় প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগের বড় নেতারাও পান। তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিশাল বাঁধটি পরিচালনা করছেন ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি খয়ের উদ্দিনের ভাই উপহার ও ভাতিজা ভুট্টু। খয়ের উদ্দিন বলেন, ‘আমি এই মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত না। বিলের মাছ যখন যার খুশি মারে।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, উপজেলার অধিকাংশ এলাকা চলনবিলবেষ্টিত। বিস্তীর্ণ এই এলাকার খোঁজখবর নেওয়ার মতো জনবল তাঁদের নেই। উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে মাছসহ জলজ প্রাণী শিকার বেআইনি হলেও এর সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা কঠিন। এর পরও তাঁরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।