তিন মাসে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দ্বিগুণ

বেসিক ব্যাংক
বেসিক ব্যাংক

রাষ্ট্র খাতের বেসিক ব্যাংকের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ঋণই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরভিত্তিক হিসাবে এ তথ্য মিলেছে। বছর শেষে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অথচ পাঁচ বছর আগে এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৫ শতাংশের মতো। একসময় গর্ব করার মতো বেসিক ব্যাংক এখন বড় এক লোকসানি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বিশেষ আনুকূল্যে’ ২০১২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বড় অঙ্কের নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) ঘাটতি রেখে লাভজনক দেখানো হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে গত বছর ব্যাংকটির নিট লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৩৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরভিত্তিক ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ হয়েছে এক হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা; যা ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ১০ হাজার ১১২ কোটি টাকা ঋণের ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর আগে গত জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯২৩ কোটি টাকা; যা সে সময় পর্যন্ত ব্যাংকটির বিতরণ করা মোট ঋণ নয় হাজার ৮৪৮ কোটি টাকার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

তবে একটি সূত্র জানায়, যেসব গ্রাহকের ঋণের মেয়াদ পূর্তি হয়েছে, সেগুলোই কেবল শ্রেণীকরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে গুণগত মান বিবেচনায় শ্রেণীকরণ করতে বলেছিল, ব্যাংকটি তা করেনি। সেটা করা হলে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়বে।

ব্যাংক সূত্র জানায়, এই দফায় গুলশান শাখায় ৬৭০ থেকে ৬৮০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ১৬০ কোটি টাকা, গুলশান শাখায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা ও অন্যান্য শাখা মিলিয়ে ৯৪০ কোটি টাকার মতো ঋণকে শ্রেণীকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শান্তিনগর শাখার গ্রাহক অটোডিফাইন, গুলশান শাখার গ্রাহক এবি ট্রেড লিংক, ইএফএস, এআরএসএস, ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজ, মা টেক্স, এস সুহী শিপিং লাইন ও এস রিসোর্স শিপিং লাইন রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সরেজমিনে পরিদর্শন প্রতিবেদনে এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেনামি, জাল-জালিয়াতি ও ভুয়া-অস্তিত্বহীন ঋণ বলে উল্লেখ করেছিল।

সূত্র জানায়, বেসিক ব্যাংকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভিশন বিভাগ থেকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাইকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার একটি প্রস্তাব শীর্ষ পর্যায় থেকে নাকচ করে দেওয়া হয়। তার পরিবর্তে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলামের কাছে একটি ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছিল। তার জবাবেও সন্তুষ্ট নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার পরেও ব্যাংকটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বেসিক ব্যাংকের এমডি ফখরুল ইসলামের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ডিএমডি কনক কুমার পুরকায়স্থ ফোন ধরেননি। অপর ডিএমডি এম মুনায়েম খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।