সিলেটে ৮১৮ কিলোমিটার নর্দমা ঢাকনাবিহীন

সিলেট নগরের অধিকাংশ এলাকার নালা-নর্দমা ঢাকনাবিহীন থাকায় জনদুর্ভোগ বেড়েই চলছে। যুগের পর যুগ জনগুরুত্বপূর্ণ এসব নর্দমায় ঢাকনা না থাকায় ছোট-বড় বহু দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
নগরবাসীর অভিযোগ, ঢাকনা না থাকায় পাড়া-মহল্লার ছোট শিশুরা খেলাধুলা করার সময় অসাবধানবশত নর্দমায় পড়ে যায়। এ ছাড়া বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে নর্দমা ও মূল রাস্তা ঠাহর করতে না পেরে অনেকেই নর্দমায় পড়ে আহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত সড়কবাতি না থাকায় রাতের অন্ধকারে মানুষ ও যানবাহন নর্দমায় পড়ে যায়। কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তুষার কর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, নর্দমায় ঢাকনা না থাকা দীর্ঘদিনের সমস্যা। নর্দমায় পড়ে পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। অথচ কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লার নর্দমা ঢাকনাবিহীন অবস্থায় রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে দরগা মহল্লা, শিবগঞ্জ, মীরাবাজার, পিরমহল্লা, কালীবাড়ী, বাগবাড়ী, চালিবন্দর, সোবহানীঘাট, উপশহর, সাগরদীঘিরপার, কুয়ারপারসহ অর্ধ শতাধিক এলাকার নর্দমাগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ ঢাকনাবিহীন অবস্থায় রয়েছে। এর বাইরে অনেক স্থানে ঢাকনা ভেঙে রড বেরিয়ে আছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন কার্যালয় সূত্র জানায়, নগরে ২৭ কিলোমিটার ছড়া এবং ৯৬৮ কিলোমিটার নালা-নর্দমা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার নর্দমায় ঢাকনা রয়েছে। তবে রামেরদীঘিরপার, জল্লারপারসহ বেশ কিছু এলাকায় ঢাকনা ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে। পিরমহল্লা এলাকার বাসিন্দা ইয়াকুব মিয়া বলেন, মহল্লার কিছু নর্দমায় ঢাকনা না থাকায় গত বছর নর্দমায় পড়ে একটি শিশু মারা গিয়েছিল। ঘটনার পর গণমাধ্যমে লেখালেখি ও সিটি করপোরেশনের বাড়তি নজরদারিতে মনে হয়েছিল নর্দমাগুলোতে ঢাকনা বসানো হবে। কিন্তু আজও তা হয়নি।
দরগামহল্লা এলাকার ব্যবসায়ী এনামুল ইসলাম বলেন, মূল রাস্তার ঠিক পাশেই ঢাকনাবিহীন বিশাল নর্দমা রয়েছে। একবার ওই নর্দমায় পড়লে প্রাণ বাঁচানো কঠিন। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে এলেও এখানে ঢাকনা বসানো হচ্ছে না। নাগরিক মৈত্রী সিলেটের আহ্বায়ক আইনজীবী সমরবিজয় সী শেখর বলেন, নর্দমাগুলো ঢাকনাবিহীন থাকাটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। বিভিন্ন ক্লিনিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা ময়লা-আবর্জনার পাশাপাশি বিষাক্ত ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ফেলছেন। এতে করে সার্বিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, নগরের প্রধান সড়কগুলোর পাশের নর্দমায় ঢাকনা রয়েছে। জনগুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে সব কটিতে ঢাকনা বসানোর কাজ করা হবে। যেসব ঢাকনা ভেঙে গেছে, সেসব পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমি দায়িত্ব নিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে নগরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের চেষ্টা করছি। অতি দ্রুততার সঙ্গে নগরবাসীর ভোগান্তি মেটাতে নর্দমাগুলোতে ঢাকনা বসানোর কাজ শুরু করা হবে।’