বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ

১৯৯০ সালের তুলনায় শিশুমৃত্যুর হার দুই-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনতে পেরেছে যে ৬২টি দেশ, বাংলাদেশ তার একটি। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যুর হার এখন ৩৮।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) একটি অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে দেশগুলো এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে, তার ২৪টি নিম্ন ও নিম্ন আয়ভুক্ত দেশ।
‘কমিটিং টু চাইল্ড সারভাইভাল: এ প্রমিজ রিনিউড’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫ বছর ধরে গোটা বিশ্ব শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনায় কাজ করেছে। ১৯৯০ সালের তুলনায় পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হার এখন ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। একই সময়ে নবজাতকদের মৃত্যুহার কমেছে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত। তবে প্রতিবেদনে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক বলেছেন, এত অগ্রগতির পরও বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১১টি শিশু মারা যাচ্ছে। এ মৃত্যু একটু চেষ্টা করলেই এড়ানো যেত। তিনি বলেন, মায়েদের গর্ভকালীন সেবা থেকে টিকা ও পুষ্টিসেবা একেবারে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারলে শিশুমৃত্যুর হার কমবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে যে দেশগুলোতে, সেগুলো সাব-সাহারা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশ। প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর চারটিই ঘটছে এ অঞ্চল দুটিতে।
অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয় অ্যাঙ্গোলায়। এ তালিকায় ৬১তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। প্রতি হাজারে বাংলাদেশে এখন শিশুমৃত্যুর হার ৩৮। ১৯৯০ সালে ছিল প্রতি হাজারে ১৪৪, ২০০০ সালে ছিল ৮৮। সামগ্রিকভাবে শিশুমৃত্যুর হার প্রতিবছরে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হারে কমেছে। তবে এখনো যত শিশু মারা যাচ্ছে, তার বড় অংশ নবজাতক। ১৯৯০ সালে মোট শিশুমৃত্যুর ৪৪ শতাংশ ছিল নবজাতক। এখন এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ শতাংশে।
শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। প্রতি হাজারে দেশটিতে এখন শিশুমৃত্যুর হার ১০। তালিকায় নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। পেছনে আছে ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে। অন্য অঞ্চলগুলো যদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারত, তাহলে গত ১৫ বছরে আরও ১ কোটি ৪০ লাখ শিশুর জীবন বেঁচে যেত।
ইউনিসেফ বলেছে, শিশুরা শুধু সেপসিস বা ম্যালেরিয়ায় মারা যাচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে শিশুরা মারা যাচ্ছে তাদের পরিবারগুলো দরিদ্র, পরিবারগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ইউনিসেফ বলেছে, শিশুমৃত্যুর হার শুধু কমলেই চলবে না, বিভিন্ন দেশের মধ্যে যে বৈষম্য বা দেশের ভেতরে ধনী ও দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে যে বৈষম্য, তা দূর করতে হবে।