দেশের ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে

দেশের ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে আছে। সচেতনতা বাড়াতে রাষ্ট্রীয়ভাবে আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালন করা প্রয়োজন। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ব্রাইটার টুমরো নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে অংশ নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। 

সাংবাদিক জয়শ্রী জামান সমমনাদের নিয়ে ব্রাইটার টুমরো সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন। ১৭ ও ১৩ বছর বয়সী দুই সন্তান আত্মহত্যা করার পর প্রতিষ্ঠানটি সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। ১০ সেপ্টেম্বর আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ব্রাইটার টুমরোর ডাকে আজ মনোচিকিৎসক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ছাড়াও প্রেসক্লাবে জড়ো হয়েছিল উৎস বিদ্যা নিকেতনের ছোট ছোট শিক্ষার্থী, ছিলেন সংগীত শিল্পী শবনম মুসতারি ও হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। সেমিনারটি শুরু হয় উৎস বিদ্যা নিকেতনের শিশুদের গান দিয়ে। গান শেষে তাদের জড়িয়ে ধরে জয়শ্রী কাঁদতে শুরু করেন। জয়শ্রী বলেন, ‘আত্মহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমীমা হোসেন ভালো ফলাফলের জন্য শিশুদের ওপর চাপ দেওয়ার অভ্যাস ছাড়ার পরামর্শ দেন অভিভাবকদের। তিনি বলেন, স্যাটেলাইট টেলিভিশনে আটকে না থেকে শিশুদের সময় দিতে হবে। সময় দেওয়ার অর্থ হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া বা বার্গার খাওয়ানো নয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, তরুণদের মৃত্যুর যে ৫০টি কারণ আছে তার মধ্যে ১১ নম্বর কারণ আত্মহত্যা। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। মৃত্যুর হারও বাড়ছে। ২০১১ সালে বিশ্বের আত্মহত্যা প্রবণ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩৮। এখন বাংলাদেশের অবস্থান দশম। প্রতিবছর গড়ে আত্মহত্যা করছে ১০ হাজার মানুষ। বিষণ্নতায় ভোগা মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। বিষণ্নতা একটা সময় মানুষকে এমনভাবে গ্রাস করে ফেলে যে সে আর যৌক্তিকভাবে কোনো কাজ করতে পারে না। এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ালে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা যাবে।
আত্মহত্যা রোধে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ম মেনে সাংবাদিকতা করার আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম।
এ দিকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফারুক আলম বলেন, বাংলাদেশে বেশি আত্মহত্যা করে মেয়েরা। অল্প বয়সে বিয়ে, গর্ভধারণ, যৌতুক ইত্যাদির চাপে মেয়েরা আত্মহত্যা করে। আমি মনে করি বিয়ের জন্য আঠারো বছর বয়সটাও কম। এ অবস্থায় বিয়ের বয়স আরও কমানো হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশসহ কৃষিপ্রধান দেশগুলোয় কীটনাশক পান করে বহু মানুষ আত্মহত্যা করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাড়িতে কীটনাশক একটি বাক্সের ভেতর চাবি দিয়ে রাখতে হবে। চাবিটি রাখতে হবে বাড়ির অভিভাবকের কাছে। এ ছাড়া কীটনাশক বিক্রির যে আইন তা-ও অনুসরণ করা দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হেলালউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন দিবস পালিত হলেও আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালিত হয় না। আত্মহত্যা প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করা দরকার।