আ.লীগ-জাসদ সংঘর্ষ, ভাঙচুর

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ভেড়ামারা শহরের ফারাকপুর রেলগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। তাঁদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার রাত আটটার দিকে উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে জাসদের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। অভিযোগ ওঠে, ওই সংঘর্ষের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করা হয়। এতে জাসদের নেতা-কর্মীদের নামে মামলাও হয়।
বুধবার ভেড়ামারা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতারা ওই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা (আলটিমেটাম) দেন এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে গ্রামছাড়া ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার হুঁশিয়ারি দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের বিবরণ অনুযায়ী, বিএনপির কর্মী সিরাজুল ইসলামের গতকাল আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। গতকাল দুপুরে সিরাজুল ফারাকপুর এলাকায় তাঁর ডেকোরেটরের কার্যালয়ে বসে ছিলেন। দেড়টার দিকে হঠাৎ জাসদ-সমর্থকেরা তাঁর ওপর হামলা চালান। এ খবর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা একত্র হয়ে পাল্টা হামলা চালান। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ভেড়ামারা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক টুটুল রায়হান (৩৫), সিরাজুল ইসলাম (৪৫), তাঁর ছেলে নিশান (১৫) ও জাসদের কর্মী মামুন। নিশানকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষের সময় জাসদের এক কর্মীর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। তাৎক্ষণিক ভেড়ামারা শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভেড়ামারা এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাব রায়হান পুলিশ সদস্যদের নিয়ে টহল দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উভয় দলের স্থানীয় নেতাদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাঁর কার্যালয়ে আলোচনা করেছেন।
ইউএনও শান্তিমণি চাকমা বলেন, ‘উভয় দলের নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তবে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা সহাবস্থানে থাকবেন। এখন দেখা যাক, কী হয়।’
আলোচনা সভা শেষে ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আক্তারুজ্জামান বলেন, জাসদের লোকজন ভেড়ামারা থেকে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চান। এ জন্য তাঁরা হামলা চালিয়ে লোকজনকে মারধর করছেন।
ভেড়ামারা উপজেলা জাসদের সভাপতি আনসার আলী অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন তাঁদের এক কর্মীকে মাথায় আঘাত করেন। এতে তাঁদের কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জাসদের দুই কর্মীর দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বিকেলে বলেন, পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। কাউকে ছাড় দেবে না।
কুষ্টিয়ায় তথ্যমন্ত্রী: এদিকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে আওয়ামী লীগের নেতারা ভেড়ামারায় অবাঞ্ছিত ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রী তাঁর ভেড়ামারার বাড়িতে যান। সেখানে তিনি বুধবার রাতযাপন করেন। গতকাল সকালে ভেড়ামারায় দুটি গ্রামে বিদ্যুৎ-সংযোগের উদ্বোধন করেন এবং বক্তব্য দেন।
দুপুরে মন্ত্রী কুষ্টিয়া শহরে বিপ্লবী বাঘা যতীনের মৃত্যুশতবার্ষিকীর আলোচনা সভায় যোগ দেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গি দমন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, এটাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। দেশে জঙ্গিবাদ থাকবে না, বিদ্যুৎ থাকবে। ঘরে ঘরে আলো যাবে। এটা সম্ভব হয়েছে জাসদ, আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের ঐক্যের জন্য। এই ঐক্য অটুট থাকবে। রাজনীতির পূর্বাপর বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগ ও জাসদের পূর্বাপর বিশ্লেষণ সাপেক্ষে উভয় দল আমরা অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ঐক্য করেছি ভয়াবহ শত্রু জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করার জন্য।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, যাঁরা হাটে-ঘাটে-মাঠে বিভিন্ন রকমের দলাদলিতে লিপ্ত আছেন, তাঁরা কার্যত খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করছেন।
বিকেলে মন্ত্রী তাঁর নির্বাচনী এলাকা মিরপুর উপজেলায় কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।