শুরু হলো দ্বিবার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনী

কক্সবাজারে গতকাল দ্বিবার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন দর্শকেরা l প্রথম আলো
কক্সবাজারে গতকাল দ্বিবার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন দর্শকেরা l প্রথম আলো

কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক দ্বিবার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনী! ঢাকার বাইরে এমন আয়োজন একটু বিস্ময়ই জাগায় যেন। পৌরসভার উল্টো দিকে আয়োজনস্থলের প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকলে আয়োজনের ব্যাপকতা টের পাওয়া যায়। নির্মীয়মাণ বিশাল আয়তনের কক্সবাজার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড পাবলিক লাইব্রেরি যেন পরিণত হয়েছে একটি শিল্পের ভুবনে।
ছোট আঙিনা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেই দোতলা ভবনের নিচতলার বাইরের দেয়ালে শোভা পাচ্ছিল শিশুদের আঁকা ছবি। কেউ এঁকেছে ভাষা আন্দোলনের ছবি, কেউ মুক্তিযুদ্ধের। একজন গ্রামের বিয়ে এঁকেছে তো আরেকজন এঁকেছে বেদেনিদের ছবি। অদ্ভুত সব মুখের ছবি দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না-কাটতেই একটি ছবিতে ভেসে এল শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর মুখ। এখানে তিনি প্রকৃতিকন্যারূপে সজ্জিত। এসব ছবি নাকি শিশুরাই এঁকেছে!
ভেতরে বিশাল মিলনায়তন। মঞ্চ নিচে, ধাপে ধাপে সিঁড়িতে উঠে গেছে বসার জায়গা। পাশের দুটি দেয়ালজুড়ে শোভা পাচ্ছে আলোকচিত্র, ছাপচিত্র, পেপার কোলাজ, পেইন্টিং। নিচে বসার জায়গায় মাঝেমধ্যে ভাস্কর্য। দোতলার আশপাশে আরও আছে ফটো মন্তাজ, প্রাচ্যকলা, ড্রয়িং, ক্যালিগ্রাফি। ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার দিনের এ আয়োজনে আরও থাকছে চলচ্চিত্র, অরিগ্যামি, পুতুলনাচ, ফায়ার স্পিনিং প্রদর্শনী।
এর মধ্যে ভারতীয় আলোকচিত্রশিল্পী নির্ভর সিং রাই কাজ করেছেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিয়ে। তাদের আত্মপরিচয়, সংস্কৃতির সঙ্গে তিনি তুলে এনেছেন তাদের প্রতি বৈষম্যের দিকটিও। ছবিগুলো দেখতে আপনাকে গ্যালারির জানালার শিক দিয়ে বাইরে তাকাতে হয়। ছবিগুলো ঝুলছে আয়োজনস্থলের সীমানাপ্রাচীরে।
এভাবেই তাদের জীবন উন্মোচিত হবে দর্শকদের সামনে। কায়সার আহমেদ ক্যামেরায় তুলেছেন কক্সবাজারের বহুমাত্রিক মানুষের জীবন।
এ ছাড়া উৎসবে থাকছে বিশেষ বক্তৃতা। এই যেমন গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় প্রাবন্ধিক সলিমুল্লাহ খান বললেন ‘পরাধীন যুগের শিল্পকলা’ নিয়ে। তিনি বলেন, বলা হতো শিল্পকলা হচ্ছে তা-ই, যা সত্য, মঙ্গল ও সুন্দর। কিন্তু এই তিনটি কি একই সঙ্গে সম্ভব? অ্যারিস্টটল থেকে কান্ট—সবাই বলেছেন, শিল্প মঙ্গলের জন্য কাজ করবে। কিন্তু শোষণের ব্যবস্থা ও কাঠামো রেখে মঙ্গল নিশ্চিত হবে কী করে? তাই আধুনিক শিল্পীরা বলছেন, শিল্পী সব সময় নতুন সত্য আবিষ্কার করবেন। সর্বজনীন মঙ্গল বলে কিছু নেই। সত্যকে অনুসরণ করে যে মঙ্গল আসে, সেটুকু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পী দিলারা বেগম জলি, তৈয়বা বেগম লিপি এবং কক্সবাজারের এডিসি (শিক্ষা) এস এম হাবিবুর রাহমান হাকিম।
এর আগে আন্তর্জাতিক দ্বিবার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনী কক্সবাজার ২০১৫-এর কিউরেটর আমিরুল রাজীব মঞ্চে সহ-আয়োজক অরণ্য শর্মা ও সব্যসাচী মিস্ত্রিকে এনে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, কোনো রকম আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াও অনেকগুলো মানুষের আন্তরিক চেষ্টায় আয়োজনটি সম্ভব হচ্ছে। তরুণতর প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী যাঁরা, শিল্পের প্রতি যাঁদের ভালোবাসা ও প্রচেষ্টা অনেক দিন ধরে, প্রধানত তাঁরাই এর অংশগ্রহণকারী।
সন্ধ্যায় সংগীত পরিবেশন করেন আহমেদ হাসান সানি ও সৌরভ সরকার। বিভিন্ন শিল্পকলার প্রদর্শনী ছাড়াও আজ শুক্রবার সকালে থাকছে শিশুদের ছবি আঁকার অনুষ্ঠান। বেলা তিনটায় থাকছে অরিগ্যামি ও পুতুলনাচ প্রদর্শনী। এ জন্য কক্সবাজারের ৬০ জন শিশুকে নিয়ে কোরীয় শিল্পী হেলিয়াং লি ও সাংমি শিন অরিগ্যামি এবং জলপরি পাপেট স্টুডিও পুতুলনাচের ওপর দুটি কর্মশালা পরিচালনা করছে। এরপর থাকবে মেহেদি হাসান নীলের সংগীত পরিবেশনা।
চার দিনের পুরো আয়োজনে বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করছে আগামী প্রকাশনী, নিত্য উপহার, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ডেপার্ট আর্ট ম্যাগাজিন, ওপেন আর্ট স্কুল, ড্রিম আর্ট প্লে, ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপ, দৈনিক কক্সবাজার, ডিজিটাল হসপিটাল কক্সবাজার প্রাইভেট লিমিটেড, দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো।