চোর অপবাদ দিয়ে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় চোর অপবাদ দিয়ে গত বুধবার রাব্বি মিয়া (১০) নামের এক শিশুকে গাছের সঙ্গে হাত-পা ও গলায় দড়ি বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
রাব্বি মিয়া উপজেলার মানিক পটল গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে ও মানিক পটল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার সকাল ১০টার দিকে রাব্বি তার সহপাঠী অমিত হাসানের সঙ্গে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। এ সময় মানিক পটল বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান রাস্তা থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে খলিল তাকে আটকে রেখে চোর চোর বলে চিৎকার করেন। তাঁর চিৎকারে একই গ্রামের আল আমিন, মনির হোসেন ও বেলাল হোসেন নামের তিন ব্যক্তি এসে রাব্বিকে হাত-পা ও গলায় দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালান। এ সময় রাব্বির চিৎকারে তার পরিবারের লোকজন গ্রাম পুলিশ আবুল কাশেমের মাধ্যমে তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তাঁরা পুলিশকে খবর দিলে বেলা তিনটার দিকে ধুনট থানার উপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম গিয়ে রাব্বিকে বাঁধন খুলে উদ্ধার করেন। নির্যাতনে রাব্বি অসুস্থ হওয়ায় পরে তাকে বিকেল চারটার দিকে ধুনট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, রাব্বিকে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
রাব্বি মিয়া বলে, ‘আল আমিন, মনির ও বেলাল আমারে গাছের সাথে দড়ি দিয়া বাইন্দা বাঁশের কুঞ্চি দিয়া পিটাইছে। আমি মেলা কান্নাকাটি করছি, তা-ও তারা ছাইড়া দেয় নাই। পরে পুলিশ আইসা ছাইড়া দিছে। আমি কিছু চুরি করি নাই।’
রাব্বির সহপাঠী আবদুল মমিন বলে, ‘রাব্বি ভালো ছাত্র। আমরা চোর ধরছে শুইনা স্কুল থাইকা সেখানে গেছিলাম। আমাগর সামনেই রাব্বিকে মারছে।’
রাব্বির চাচাতো ভাই নবীর উদদীন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে খলিলুর রহমানের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ ছিল। এর জের ধরেই তাঁরা রাব্বিকে চুরির অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করেছেন। এলাকার মাতব্বরেরা এর বিচার করতে চেয়েছেন। সুবিচার না পেলে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘রাব্বি মিয়া আমার প্রতিবেশী নাহারের ঘরে ঢুকে চুরির চেষ্টা করে। আমি সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় রাব্বিকে আটক করি। পরে নাহারের পরিবারের লোকজন এসে রাব্বিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। বাজারে তাঁর মিষ্টির দোকানে আটবার চুরি হয়েছে। এ বিষয়ে রাব্বিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে চুরির কথা স্বীকার করে। তাকে মারধর করা হয়নি। পূর্বশত্রুতার জের ধরে রাব্বির পরিবার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’
গ্রাম পুলিশ আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি শিশুটির হাত-পায়ের বান্দন খুইলা দিতে চাইছিলাম। কিন্তু শিশুটি দৌড়ান দিবে বলে খলিল, বেলাল, মনির, আল আমিন বান্দন খুলে দিতে দেয় নাই। তা-ও আমি জোর করে গলার বান্দন একটু ঢিলা করে দিয়েছি।’
এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটিকে বেঁধে রাখা অবস্থায় পাই। আমি শিশুটির হাত-পায়ের বাঁধন খুলে তাকে উদ্ধার করি।’
ধুনট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) পি এন সরকার বলেন, স্থানীয় লোকজনের কাছে একটি শিশুকে মারধরের ঘটনা জানতে পেরে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।