দুই ছাত্রকে হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে হত্যা, পরে মুক্তিপণ দাবি!

সাভার থেকে গ্রেপ্তার হওয়া অপহরণকারী চক্রের ছয় সদস্য । ছবি : প্রথম আলো
সাভার থেকে গ্রেপ্তার হওয়া অপহরণকারী চক্রের ছয় সদস্য । ছবি : প্রথম আলো

দুই কলেজছাত্রকে অপহরণের পর রশি দিয়ে হাত-পা বাঁধে অপহরণকারীরা। এরপর দেহের সঙ্গে কংক্রিট বেঁধে জীবন্ত অবস্থায় তারা তাদের সাভারের বংশী নদীতে ফেলে দেয়। এরপর ওই দুই ছাত্রের পরিবারের কাছে মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

ঢাকার সাভার থেকে গ্রেপ্তার হওয়া অপহরণকারী চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ তথ্য জানিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে করা আজ শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়েছে। আর লাশ দুটি উদ্ধার করতে ডুবুরি নামানো হয়েছে। তবে আজ রাত আটটা পর্যন্ত লাশের হদিস মেলেনি।

দুই ছাত্রের একজন সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মুনসের আলী। মুনসের নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। সে তাঁর বড় ভাইয়ের সঙ্গে সাভার পৌর এলাকার আড়াপাড়া মহল্লায় থাকত। সে চিত্রশিল্পীর কাজ করে পড়া-লেখা করত।
আরেকজন হলো মানিকগঞ্জ খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মনির হোসেন। মনির মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের কুয়েত প্রবাসী পরশ আলীর ছেলে। সে মানিকগঞ্জ শহরের সেওতা এলাকার একটি মেসে থাকত।
অপহরণ করে হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বাদশা মিয়া, আক্তারুজ্জামান, শুক্কুর আলী, মনোয়ার হোসেন, আজগর আলী ও লাল মিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল আজীম বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল রাতে সাভারের আড়াপাড়া থেকে প্রথমে বাদশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাকি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা অপহরণের বিস্তারিত খুলে বলেন। এই অপহরণের নেতৃত্বে ছিলেন আক্তারুজ্জামান।

সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোফাজ্জল হোসেন বলেন, রঙের কাজ করানোর কথা বলে অপহরণকারী চক্রের সদস্য বাদশা গত ২৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে মুঠোফোনে মুনসেরকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর তাঁকে সাভার নামাবাজার এলাকার পাশে বংশী নদীর তীরে নিয়ে একটি ট্রলারে তোলেন। ট্রলারে করে সাভারের তেতুলঝোঁড়া এলাকায় নিয়ে বাদশা ও তাঁর সহযোগীরা মুনসেরের হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে গলায় কংক্রিটের টাঙ্ক ঝুলিয়ে নদীতে ডুবিয়ে দেন। এরপর থেকে তাঁর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন।
মুনসের বড় ভাই মঞ্জু বলেন, মুনসেরকে অপহরণের করে হত্যার পরেও অপহরণকারীরা তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসছিলেন। এ ব্যাপারে সাভার থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ একটি হারানো ডায়েরি (জিডি) নিয়ে বিদায় করে দেন।

মানিকগঞ্জ সদর থানার এসআই আবুল হাশেম বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে বাদশা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মনিরকে মানিকগঞ্জ থেকে সাভার নিয়ে আসেন। এরপর ওই দিন রাতেই তাঁকে ট্রলারে করে বংশী নদীতে নিয়ে গলায় কংক্রিটের টাঙ্ক ঝুলিয়ে নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করেন। এর আগে মায়ের কাছে টাকা চেয়ে মনিরের করুণ আকুতি রেকর্ড করে মুঠোফোনে তার পরিবারের সদস্যদের শুনিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেন।

মনিরের মা মালেকা বেগম বলেন, তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে হত্যার পর ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছিল অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় গত শুক্রবার তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেছেন।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার বাদশা বলেন, অপহৃতদের লুকিয়ে রাখতে ঝামেলা হয়। এ কারণে অপহরণের পরপরই তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। জীবন্ত অবস্থায় ডুবিয়ে মারার বিষয়ে তিনি বলেন, লাশ গুম করে মুক্তিপণের আদায়ের আশায় তাঁদের ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে লাশ ভেসে ওঠার সম্ভাবনা থাকে না।

এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রাসেল শেখ বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নিয়ে আজ বিকেল থেকে ডুবুরির সাহায্যে নদীতে তল্লাশি চালানো হয়। রাত আটটার পর্যন্ত তল্লাশির বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামীকাল আবার তল্লাশি চালানো হবে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।