বনশ্রীতে ১০ শিশু উদ্ধার, নারীসহ চারজন গ্রেপ্তার

গতকাল রামপুরা বনশ্রী এলাকার একটি বাড়ি থেকে ১০ জন শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। ছবিটি গতকাল তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সামনে থেকে তোলা। পুলিশ আশা করছে, এই শিশুদের ছবি প্রকাশিত হলে স্বজনেরা তাদের শনাক্ত করতে পারবেন l প্রথম আলো
গতকাল রামপুরা বনশ্রী এলাকার একটি বাড়ি থেকে ১০ জন শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। ছবিটি গতকাল তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সামনে থেকে তোলা। পুলিশ আশা করছে, এই শিশুদের ছবি প্রকাশিত হলে স্বজনেরা তাদের শনাক্ত করতে পারবেন l প্রথম আলো

রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকার একটি বাসা থেকে গতকাল শনিবার দুপুরে পুলিশ ১০ শিশুকে উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া শিশুরা হলো মোবারক হোসেন (১৪), আবদুল্লাহ আল মামুন (১১), মো. বাবলু (১০), মো. আব্বাস (১০), মো. স্বপন (১১), মো. আকাশ (৯), মান্না ইব্রাহিম আলী (১০), মো. রাসেল (১৪), মো. রফিক (১৪) ও মো. ফরহাদ (৯)।
রামপুরা থানার পুলিশ জানায়, গতকাল সকালে শিশু মোবারকের চাচা মনির হোসেন থানায় এসে অভিযোগ করেন, ছয় মাস ধরে নিখোঁজ তাঁর ভাতিজা মোবারককে বনশ্রী সি ব্লকের ১০ নম্বর সড়কের এক বাসায় আটকে রাখা হয়েছে। পুলিশ দুপুরে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে মোবারকসহ ১০ শিশুকে উদ্ধার করে। শিশুদের আটকে রাখার অভিযোগে আরিফুর রহমান (২৪), হাসিবুল হাসান ওরফে সবুজ (১৯), জাকিয়া সুলতানা (২২) ও ফিরোজ আলম খান ওরফে শুভকে (২১) আটক করা হয়। বিকেলে তাঁদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন মনির হোসেন। ১০ শিশুকে তেজগাঁও থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে ছেলে শিশু রাখার ব্যবস্থা না থাকায় তাদের আবার রামপুরা থানায় ফেরত নেওয়া হয়।
মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বাসা খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ায়। মোবারকের বাবা কামাল হোসেন মারা গেছেন। ছয় মাস ধরে মোবারক নিখোঁজ। নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি খিলগাঁও থানায় একটি জিডি করেন। গতকাল সকালে যে বাসা থেকে মোবারক উদ্ধার হয়েছে সেই বাসার গৃহকর্মী মোবারককে আটকে রাখা হয়েছে বলে তাঁদের খবর দেন।
রামপুরা থানায় মোবারক বলেছে, ছয় মাস আগে মায়ের সঙ্গে রাগ করে সে বাসা থেকে বেরিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে যায়। সেখান থেকে আরিফ ও জাকিয়া তাকে ধরে জোর করে নিয়ে বাসায় আটকে রাখে। তারা তাকে বের হতে দেয়নি।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলেছে, আরিফুর রহমান, হাসিবুল হাসান, জাকিয়া সুলতানা ও ফিরোজ আলমের দাবি তাঁরা ‘অদম্য বাংলাদেশ’ নামে এনজিও পরিচালনা করেন। সরকারের অনুমতি নিয়ে পথশিশুদের পুনর্বাসনে কাজ করে আসছেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কথা বলতে দেয়নি পুলিশ।
এ ব্যাপারে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা এনজিও চালু করলেও বিষয়টি রামপুরা থানা-পুলিশকে লিখিতভাবে জানাননি। কিংবা সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেননি। বাড়ির সামনে এনজিওর সাইনবোর্ড নেই। তাঁরা মোবারককে জোর করে আটকে রেখেছিলেন। এ ঘটনায় মনির হোসেন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার করা কাগজপত্র যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
তবে উদ্ধার হওয়া নয়জন পথশিশু থানায় বিকেলে প্রথম আলোকে বলেছে, তারা আগে সদরঘাট ও কমলাপুর রেলস্টেশনের টোকাই ছিল। এনজিওটিতে ভালো থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি তারা নিজেদের নাম লিখতে পারছে, পড়তে পারছে। এদের মধ্যে কেউ জানায়, মা বা বাবাকে না জানিয়ে এসেছে। আবার কেউ জানায়, রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে আসার পর স্বজনদের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি।
বনশ্রী সি ব্লকের ১০ নম্বর সড়কের একটি বাড়ি থেকে শিশুগুলোকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে ওই বাড়ি গিয়ে জানা যায়, বাড়িটির মালিক সেখানে থাকেন না। এক বছর আগে ছয়তলা ভাড়া নেন ওই এনজিওর কর্মীরা।