এক শ হাত মাটির নিচে গণতন্ত্র: এরশাদ
গণতন্ত্র অনেক আগেই ১০০ হাত মাটির নিচে চলে গেছে; জাতীয় পার্টি (জাপা) ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র আবার মুক্তি পাবে—প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর দল মানুষের পাশে থেকে ‘সব ভালো ভালো কাজ’ করছে।
আজ রোববার যশোর জিলা স্কুল অডিটোরিয়ামে জাপার জেলা দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে এইচ এম এরশাদ এসব মন্তব্য করেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এরশাদ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ‘কোন গণতন্ত্রের কথা আপনারা বলেন? গণতন্ত্র অনেক আগেই ১০০ হাত মাটির নিচে চলে গেছে। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র আবার মুক্তি পাবে।’
এরশাদ বলেন, ‘বিএনপি এখন শেয়ালের গর্তে। মাঝে-মধ্যে মাথা উঁচু করে বিবৃতি দিয়ে আবার ভয়ে লুকায়। আর আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা আপনারা জানেন। আমরাই একমাত্র দল। যারা মানুষের পাশে থেকে সব ভালো ভালো কাজ করছি। আমাকে মানুষ ভুলতে পারবে না। এখন আবার আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।’
নিজের বয়স ৪০ বছর দাবি করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার বয়স কত? আমি বলি ৪০। কারণ আমি জাতীয় পার্টিকে আবার প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। মানুষ পরিবর্তন দেখতে চায়।’
পে-স্কেলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যর সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, ‘একজন সুস্থ মানুষ শিক্ষকদের নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন না। পড়াশোনা পণ্য নয়, পণ্য হলে ভ্যাট দিতে হতো। শিক্ষায় ভ্যাট আদায় করে কত টাকা পাবেন? ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে। পাচারের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাটের টাকা আদায়ের দরকার হবে না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মানুষ আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুঃশাসনের অবসান চায়। গণতন্ত্রের নামে তারা দলতন্ত্র করেছে। এর গোড়াপত্তন করেছে বিএনপি আর পাকাপোক্ত করেছে আওয়ামী লীগ।’
সম্মেলনে শরিফুল ইসলাম চৌধুরী জাতীয় পার্টির সভাপতি ও মিনহাজুল আরেফিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিবার্ষিক-বার্ষিক সম্মেলনে দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ তাঁদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় এরশাদ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান।
সম্মেলনের সমস্যায় ছাত্ররা
এদিকে স্কুল চলার সময়ে স্কুল ক্যাম্পাসে উচ্চ স্বরে মাইক বাজিয়ে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি করায় পাঠদানে ব্যাপক সমস্যা হয়েছে বলে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন। রাজনৈতিক এ অনুষ্ঠানের কারণে দিবা শাখার অধিকাংশ অভিভাবক তাঁদের ছেলেদের স্কুলে পাঠাননি।
স্কুল সূত্রে জানা গেছে, যশোর জিলা স্কুলে সকাল ও দিবা নামে দুটি শাখা রয়েছে। সকাল সাড়ে সাতটায় সকাল শাখার পাঠদান শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে ১১টায় শেষ হয়। পরে শুরু হয় দিবা শাখার পাঠদান।
এদিকে সকাল নয়টা থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলের নেতা-কর্মীরা দলে দলে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে আসতে থাকেন। এ সময় উচ্চ স্বরে মাইক বাজিয়ে বক্তৃতা করা হয়। বেলা ১১টার দিকে প্রধান অতিথি এরশাদ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চালানো হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল সময়ে ক্যাম্পাসে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি করায় পাঠদানে সমস্যা হয়েছে। অনেক অভিভাবক তাদের ছেলেদের দিবা শাখায় ক্লাসে পাঠাননি। এ জন্য এ শাখায় প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী কম ছিল। ঘরোয়া অনুষ্ঠানের কথা বলে তারা অডিটোরিয়াম ভাড়া নিলেও তারা সে কথা রাখেননি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টি যশোর জেলার নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুল প্রাঙ্গণে এ ধরনের অনুষ্ঠান করা আমাদের ঠিকই হয়নি। হল ভাড়া নেওয়ার সময় আমি জানতাম না। জানলে হয়তো এমনটি হতো না।’