সিমের তথ্য নির্বাচন কমিশনে হস্তান্তর শুরু

সিম নিবন্ধনের তথ্য যাচাইয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় ও নিবন্ধন অনুবিভাগে (এনআইডি) গ্রাহকদের ডেটা (তথ্য) হস্তান্তর শুরু করেছে মুঠোফোন অপারেটররা। পাশাপাশি এনআইডির সঙ্গে চুক্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে অপারেটররা।
গতকাল রোববার সব অপারেটরই এনআইডি কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু গ্রাহকের তথ্য হস্তান্তর করেছে। এর মধ্য দিয়ে মুঠোফোনের গ্রাহকদের পূর্বঘোষিত নিবন্ধন ও যাচাই প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র।
মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী অপারেটররা এনআইডি কর্তৃপক্ষকে তথ্য দেওয়া শুরু করেছে। এনআইডি কর্তৃপক্ষ সেসব তথ্য গ্রহণও করেছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী কাজগুলো করা হবে।
ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এনআইডি কর্তৃপক্ষ মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে পাওয়া গ্রাহকদের তথ্য এনআইডি তথ্যভান্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে। এরপর এ সম্পর্কিত তথ্য মন্ত্রণালয়কে দেবে।
এনআইডি কর্তৃপক্ষ মিলিয়ে দেখার পর কারও তথ্য সঠিক পাওয়া গেলে ওই গ্রাহককে আর নিবন্ধন করতে হবে না। যাঁদের তথ্য সঠিক পাওয়া যাবে, না তাঁদের এসএমএসের মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ওই সব গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের নির্দেশিত উপায়ে নির্ধারিত ফরমে নিবন্ধন করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে একাধিক মোবাইল নম্বরের নিবন্ধন পাওয়া গেলে ওই ব্যক্তিকে সেসব নম্বরের মালিকানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্য এসব গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হবে। এ ক্ষেত্রেও সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নিবন্ধনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। একজনের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অন্য কেউ ভুয়া নিবন্ধন করেছে কি না, সেটা নিশ্চিত করার জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন গতকাল বলেন, ‘আমরা অপারেটরদের কাছ থেকে কিছু ডেটা পেয়েছি। সেগুলো যাচাই করে মন্ত্রণালয়কে এ-সংক্রান্ত মূল্যায়ন জানাব। তবে চুক্তির আগ পর্যন্ত অপারেটরদের কাছে এ-সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া যাবে না। আইনেই এর বাধা রয়েছে।’
অপারেটরদের সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গে সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, গতকালই (রোববার) বাংলালিংক, এয়ারটেল ও সিটিসেলের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করার জন্য কোম্পানি তিনটির দেওয়া প্রস্তাবপত্র অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন। কোম্পানিগুলোকে এ-সংক্রান্ত ফি জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, অতি দ্রুত মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে এ চুক্তি হবে। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের দেওয়া তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য এনআইডি সার্ভারে মুঠোফোন অপারেটররা প্রবেশের সুযোগ পাবে।
‘এবারের নিবন্ধন-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিবন্ধন-সম্পর্কিত জটিলতা যেন আর না থাকে’—এ কথাটি আবারও উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোবাইল গ্রাহকদের নিজেদের নিরাপত্তা এবং এ খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ প্রক্রিয়াটি শুরু করা হয়েছে। অনিবন্ধিত সিম কার্ড ব্যবহার করে মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেলের মতো ঘটনা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপরাধের ঝুঁকি কমানো, অবৈধ ভিওআইপি পরিচালনা বন্ধ করতে সিম নিবন্ধনের বিকল্প নেই। এ থেকে পিছিয়ে আসারও সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বায়োমেট্রিকস পদ্ধতিও যুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।