'সংখ্যালঘু নিঃসরণ হলে পরিণতি ভয়াবহ'

‘কুখ্যাত শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইনের ৫০ বছর: জনগণের দুর্দশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ সোমবার বিকেলে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা
‘কুখ্যাত শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইনের ৫০ বছর: জনগণের দুর্দশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ সোমবার বিকেলে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা

এক সময় দেশে ৩১ ভাগ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ছিল। এখন আছে মাত্র নয় ভাগ। এই প্রক্রিয়া শূন্যতে চলে গেলে এ দেশের গণতন্ত্রের পরিণতি ভয়াবহ হবে। তাই এখনই একটি নতুন অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে। 

আজ সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘কুখ্যাত শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইনের ৫০ বছর: জনগণের দুর্দশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, নিজেরা করিসহ ১২টি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক কামাল লোহানী।
গোলটেবিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমি খুব ভয়াবহ অবস্থা দেখছি। যে নয় ভাগ সংখ্যালঘু আছে, তাদেরও ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছি। গণতন্ত্রও এক রকম ব্যর্থ হচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকলে এ দেশের গণতন্ত্র আফগানিস্তানের মতো হবে।’ তিনি বলেন, ‘নিঃসরণ প্রক্রিয়া শূন্যতে যাওয়ার আগেই সাধু সাবধান। এই নয় ভাগ ধরে রাখতে না পারলে বাঙালির চেতনা ব্যাহত হবে। তাই সকলের অস্তিত্ব রক্ষায় নিঃসরণ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।’
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘ক্ষমতায়নের প্রতিনিধিত্বের মধ্যে সংখ্যালঘু নাই, সেনাবাহিনী, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ), সিভিল সার্ভিসে নাই। ব্যাংক থেকে টাকা আনতে গেলে বলবে, “না আপনাকে টাকা দেওয়া যাবে না। আপনি সংখ্যালঘু। ইন্ডিয়া চলে যাবেন। ” এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে দেশে সেক্যুলার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে কী করে?’
প্রতিবেশী ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বিজেপি সুড়সুড়ি দিচ্ছে। এখন এটা কোথায় যাবে বলা যায় না। যারা ডাকছে, এটাও ভালো লক্ষণ নয়। কিন্তু ভারতের সংখ্যালঘুদের ঠিকই তারা ধরে রাখছে।’
দীর্ঘ দিনেও অর্পিত সম্পত্তি আইনের কার্যকর না হওয়ার সমালোচনা করে সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘এই আইন ছয়বার সংশোধিত হয়েছে। এর কারণ কি?’ বিচারক সংকটের কারণে মামলা জট বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫৫ হাজার পুলিশ নিয়োগ করা হবে। তাদের দেওয়া চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হবে। কিন্তু পাঁচ’শ বিচারক নিয়োগের কথা কেউ বলে না। ১৬ কোটি মানুষের দেশে এক হাজার দুই’শ বিচারক। প্রতি দেড় লাখে মাত্র একজন।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত বলেন, ‘শত্রু সম্পত্তির সমস্যা কেবল সংখ্যালঘুর সমস্যা নয়, এটি রাজনৈতিক সমস্যা, গণতন্ত্রের সমস্যা।’
সিপিবির সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর যেভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন, এটা নিয়েও তাঁর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, অর্পিত সম্পত্তি আইন জাতীয় ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনার বিরোধী। এটি জাতির কলঙ্ক। আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে যেসব অর্পিত সম্পত্তি আছে তা পুনরুদ্ধার করে অভিযুক্ত নেতাদের বহিষ্কারের দাবি জানান তিনি।
সাবেক বিচারপতি কাজী এবাদুল হক তিনটি প্রস্তাব দিয়ে বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী জজ ও যুগ্ম জজদের দিয়ে মামলা পরিচালনা করতে হবে। মামলায় সরকার পক্ষ জবাব না দিলে নির্দিষ্ট সময় পর একতরফাভাবে চলবে। রায় কার্যকর না হলে সংশ্লিষ্ট আদালতকে অবমাননা গ্রহণ করার ক্ষমতা দিতে হবে।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, সুব্রত চৌধুরী, খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্মল রোজারিও, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, সাংবাদিক ও কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্ত, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা সংগঠন নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির।