গরমে খোলা শরবত স্বস্তির বদলে ঝুঁকি

পাবনার বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১৫ দিনে ৩৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এই সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশি। অতিরিক্ত গরম ও বাজারের খোলা শরবত খাওয়া এর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কার্তিক কুমার সাহা বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। তিনি বলেন, গরম বেশি পড়ায় লোকজন হাট-বাজারে গিয়ে ফুটপাতের শরবত পান করছে। একই গ্লাসে সবাই খাচ্ছেন। এতে হয়তো ডায়রিয়ার মাত্রা বাড়ছে।
উপজেলার বেশির ভাগ হাটেই বিক্রি হচ্ছে বরফ মেশানো শরবত। শরবত বিক্রেতারা অপরিচ্ছন্ন পাত্রে পানি সংগ্রহ করে তাঁর সঙ্গে বরফ মেশাচ্ছেন। ব্যবহৃত বরফ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি করা হয় না। আবার শরবত তৈরির সময় মিষ্টির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর ঘনচিনি ও স্যাকারিন। এ ছাড়া হাট-বাজারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলা অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন খাদ্য। এসব খাদ্যে অনবরত মাছি যেমন বসছে, তেমনি পড়ছে ধুলা-বালু।
নাকালিয়া হাটে শরবত বিক্রি করছিলেন নাজমুল হোসেন নামের এক বিক্রেতা। তিনি জানান, গরম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শরবত বিক্রি বেড়ে গেছে। মাস খানেক আগে দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ গ্লাস শরবত বিক্রি হয়েছে। আর এখন গরম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ২৫০ গ্লাসের বেশি শরবত বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহ দু-এক আগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন পেঁচাকোলা গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৪৫)। তিনি বলেন, ‘হাটে যায়া এক গিলাস শরবত কিইন্যা খাইছিল্যাম। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই আমার ডায়রিয়া শুরু হয়।’
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী পিয়াস বলে, ‘বাজারে পুরি কিইন্যা খাইছিল্যাম। সবাই যে গেলাসে পানি খায়, আমিও সেই গেলাসে ওই দোকানের পানি খাইছিল্যাম। বাজারের থ্যা বাড়িত যাওয়ার পর আমার পাতলা পায়াখানা ও বমি শুরু হয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এস এম মিলন মাহমুদ বলেন, ‘বেশির ভাগ শরবত বিক্রেতার কাছে যে পানি ও বরফ রয়েছে তা নিরাপদ নয়। এ কারণে লোকজন অসুস্থ হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ঘনচিনি দেওয়া শরবত স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে কেউ যাতে শরবত বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করতে না পারে, সে ব্যাপারে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।