নারী ও শিশুস্বাস্থ্যে দ্রুত এগিয়েছে বাংলাদেশ

প্রভাবশালী চিকিৎসা সাময়িকী ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল (বিএমজে) বলছে, কম বরাদ্দ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা থাকার পরও স্বল্প ও মধ্যম আয়ের ১০টি দেশ মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়েছে। ওই তালিকার শুরুতে আছে বাংলাদেশ। অন্য দেশগুলো হচ্ছে কম্বোডিয়া, চীন, মিসর, ইথিওপিয়া, লাওস, নেপাল, পেরু, রুয়ান্ডা ও ভিয়েতনাম।
গত মঙ্গলবার ‘ন্যাশনাল লিডারশিপ: ড্রাইভিং ফরওয়ার্ড দ্য আপডেটেড গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি ফর উইমেন্স, চিলড্রেনস অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্টস হেলথ’ শীর্ষক প্রবন্ধে বিএমজে বলেছে, লক্ষ্য নির্ধারণ করার চেয়ে লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন। স্বাস্থ্য খাতের লক্ষ্য অর্জনে এ কথা বিশেষভাবে সত্য নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর ক্ষেত্রে। বিশেষ করে যেসব দেশে দুর্বল শাসনব্যবস্থা, দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর স্বল্পতার পাশাপাশি মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর সংখ্যা বেশি। কীভাবে জাতীয় নেতৃত্ব হালনাগাদ বৈশ্বিক কৌশল বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারেন, প্রবন্ধে সে বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সাপ্তাহিক এই ব্রিটিশ চিকিৎসা সাময়িকীর যাত্রা শুরু ১৮৪০ সালে। সেদিক এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন চিকিৎসা সাময়িকী।
মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যে বাংলাদেশের অর্জনের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নতিতে সারা দেশে কাজ করছেন। এ নিয়ে দেশজুড়ে অত্যন্ত দৃঢ় নেটওয়ার্ক আছে। এর সঙ্গে দাতা ও উন্নয়ন সহযোগীরাও জড়িত।
বিএমজে বলছে, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের অগ্রগতিতে বাংলাদেশসহ এই ১০টি দেশ নির্দিষ্ট কোনো গৎবাঁধা পদ্ধতি প্রয়োগ করেনি। তবে তিনটি বিষয়ে প্রতিটি দেশই জোর দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির ভিত্তিতে তৈরি নীতি-নির্দেশনা; উদাহরণ সৃষ্টিকারী কর্মসূচির কৌশলগত প্রয়োগ এবং শিক্ষা, জেন্ডার কর্মসূচি, পয়োব্যবস্থাপনা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের মতো একাধিক খাতভিত্তিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বারোপ।
প্রবন্ধে বলা হয়েছে, নারী, শিশু ও কিশোর-কিশোরের স্বাস্থ্য সেবাদাতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক অপূর্ণতা। রাজনৈতিক নেতৃত্ব স্বাস্থ্য খাত পুনর্গঠনের রাস্তা দেখাতে অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারেন, কিন্তু হালনাগাদ বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জন করতে হলে তাকে টেকসই ও কার্যকর হতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য উদ্যোগগুলো এগিয়ে নেওয়ার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে বিনিয়োগের সমর্থন থাকতে হবে।
বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার ছিল ১৫১ (প্রতি হাজার জন্মে)। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যে (এমডিজি) ২০১৫ সালে তা কমিয়ে ৪৮-এ আনার কথা বলা হয়। তবে বাংলাদেশ ২০১৩ সালেই এই লক্ষ্য অর্জন করে। নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশ এ রকম একাধিক লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে।
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক শামস-এল-আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অর্জনের পেছনে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রতিশ্রুতির বড় ভূমিকা আছে। তবে শিক্ষা, দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যে অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। পিছিয়ে থাকা ক্ষেত্রগুলোতে জোর দিতে হবে। সবাইকে সরকারি কর্মকাণ্ডে সহায়তা দিতে হবে।’
বিএমজে বলছে, অর্জন ধরে রাখতে ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং নিজেদেরই জাতীয় স্বাস্থ্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি অংশীদারি ও জবাবদিহি জোরদার করতে হবে। সাময়িকীটি লিখেছে, স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় নেতৃত্বের ভূমিকা মূল্যায়নে তারা দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। প্রথমত, স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে স্বাস্থ্যপদ্ধতিগুলো বাস্তবায়নে বাধা ও সমাধান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণার মূল্যায়ন। দ্বিতীয়ত, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে বিভিন্ন দেশের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও প্রশাসনের নেতাদের সঙ্গে একাধিক পরামর্শ বৈঠক।
এ বছর সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) নামের বৈশ্বিক কর্মসূচি শেষ হচ্ছে। আগামী বছর থেকে শুরু হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) কর্মসূচি। জাতিসংঘের বৈশ্বিক দুই কর্মসূচির মাঝের সময়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই চিকিৎসা সাময়িকী বলছে, নারী, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নির্ভর করে দেশগুলোর টেকসই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্বের ওপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংস্থা, বিভিন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা বিএমজের গবেষণা ও নীতি-নির্দেশনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।