পাচারের ঘটনা কি না নিশ্চিত নয় পুলিশ

মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে গ্রেপ্তার হওয়া বেসরকারি সংগঠনের চার সদস্যকে রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। রামপুরা থানার পুলিশ জানিয়েছে, এসব যুবক যে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত, সে ব্যাপারে পুলিশ এখনো কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি। তাঁদের কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে।
তবে ওই চারজনের পরিবারের অভিযোগ, পথশিশুদের লেখাপড়া আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঢাকায় ‘মজার স্কুল’ নামে একটি বিদ্যালয় চালু করেছিলেন আরিফুর রহমান (২৪) ওরফে আরিয়ান। তাঁরা ঢাকার ছিন্নমূল শিশুদের জন্য কাজ করতেন। এ জন্য ‘অদম্য বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থাও তাঁরা গড়ে তুলেছিলেন।
গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার সি ব্লকের একটি বাসা থেকে ১০ শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আরিফুর রহমান, হাসিবুল হাসান (১৯), জাকিয়া সুলতানা (২২) ও ফিরোজ আলম খানকে (২১) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া চারজনকে গত রোববার দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বুধবার তাঁদের আদালতে পাঠানো হলে মহানগর হাকিম কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে দেওয়া পুলিশি প্রতিবেদনে বলা হয়, আটক হওয়া ব্যক্তিরা পাচারকারী কি না, সে ব্যাপারে যাচাই-বাছাই চলছে।
রামপুরা থানার পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার করা শিশুদের মধ্যে একজনের চাচা মনির হোসেন থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলার ভিত্তিতে পুলিশ এই চারজনকে গ্রেপ্তার করে। মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বাসা খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া এলাকায়। তাঁর ভাতিজা ছয় মাস ধরে নিখোঁজ ছিল। হঠাৎ তিনি জানতে পারেন, রামপুরার ওই বাসায় তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তাই তিনি মামলা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এরা যদি অপরাধী না হয়ে থাকে, তাহলে ছাড়া পেলে আমার কোনো অসুবিধা নেই।’
তবে সেদিন উদ্ধার করা বাকি নয়টি শিশুই প্রথম আলোকে জানিয়েছে, তারা আগে সদরঘাট ও কমলাপুর রেলস্টেশনের টোকাই ছিল। সেখানে তারা মাদক সেবন করত। আরিফ ও জাকিয়া তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। ভালো থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি তারা নিজেদের নাম লেখা শিখেছে বলেও জানায়।
অদম্য বাংলাদেশের কয়েকজন সদস্য জানান, যে শিশুটির চাচা অভিযোগ করেছেন, সেই শিশুটিকে রাস্তায় পেয়ে আরিয়ান এখানে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সে লেখাপড়া না করে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল। কিন্তু আরিয়ান তাকে লেখাপড়া করতে বলেন। কিন্তু এখন ওই শিশুটির চাচা উল্টো মামলা করেছেন। এ ক্ষেত্রে পুলিশ বা অন্য কেউ এই মামলা করতে তাঁকে উৎসাহিত করেছে কি না, সেটা তদন্ত করা দরকার। কারণ, এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেই পুরো ঘটনা জানা যেত। এমনকি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বুঝেছিলেন, আরিয়ান দোষী নন। তারপরেও রামপুরা থানার পুলিশের আগ্রহেই এই মামলা হয়। আরিয়ানের বোন জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছর ধরে তাঁর একমাত্র ভাইটি ছিন্নমূল বাচ্চাদের নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। পরিবারের সবাই বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। সবাই চেয়েছেন, তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক। কিন্তু আজ মিথ্যা অপবাদে তাঁকে পুলিশের নির্যাতন সইতে হচ্ছে।
তবে রামপুরা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, কোনো ধরনের নির্যাতন করা হচ্ছে না।