কোরবানির পশুর হাট জমে উঠছে

জমে উঠছে কোরবানির পশুর হাট। হাটে বিক্রেতারা পশু নিয়ে আসছেন, ক্রেতারাও আনাগোনা শুরু করেছেন। ক্রেতারা পশু দেখছেন, দাম যাচাই করছেন, তবে কিনছেন কম। গতকাল শনিবার রাজধানীর গাবতলী ও পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ গরুর হাট ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। হাটে দেশি গুরুই বেশি।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকালই রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাট বসতে শুরু করেছে। দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় এবার ১৮টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গাবতলীর হাট: দূর থেকে অনেকটা হাতির মতো মনে হওয়ায় কাছে গিয়ে দেখা যায় এটি বিশাল এক গরু। বেশ উঁচু, স্বাস্থ্যবান। গরুর কাছে উৎসুক মানুষের ভিড়, পাশে গিয়ে মুঠোফোনে ছবিও তুলছেন কেউ কেউ। গাবতলীর হাটে তোলা এই গরুর দাম হাঁকানো হয়েছে ২২ লাখ টাকা।

গরুর মালিক আলমগীর হোসেন বললেন, ১১টি গরু নিয়ে গতকাল সকালেই কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসেছেন। তিন বছর আগে গরুটি কিনেছিলেন পাবনা থেকে। চার বছর বয়সী গরুটির উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট আর লম্বায় নয় ফুট। তিনি বলেন, ‘মানুষ দাম শুনছে, কেউ কিনতে চায়নি। ২০ লাখ হলে বিক্রি করব।’

দাম শুনে মধ্য বাড্ডা থেকে আসা মিজানুর রহমানের আক্কেলগুড়ুম অবস্থা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা গরুর দাম এত হতে পারে নাকি? এটা কে কিনবে তাকে দেখার বড় আশা।’ এই হাটে পাবনার বেড়া থেকে সাতটি সিন্ধি জাতের গরু এনেছেন মাহবুব আলম। আলাদা করে মালা আর ঘণ্টা পরানোর কারণে মানুষের বাড়তি নজর কেড়েছে গরুগুলো। মাহবুব গরুগুলোর দাম হেঁকেছেন ১২ লাখ টাকা করে। তিনি বলেন, অবস্থা ভালো হলে দু-একদিনের মধ্যে আরও ১৪টি গরু আনবেন গ্রাম থেকে।

বাড্ডা থেকে দুই ভাই হাজি আবদুল গাফফার মোল্লা আর মোতালেব মোল্লা এসেছিলেন গরু কিনতে। গাফফার মোল্লা বলেন, এবার অন্যবারের তুলনায় দাম বেশি। মাঝামাঝি সাইজের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে এক লাখ টাকা। অথচ গতবার এই ধরনের গরু পাওয়া গেছে ৪০-৫০ হাজার টাকায়। তিনি আর তাঁর ভাই মিলে দুই লাখ টাকায় দুটি গরু কিনবেন বলে হাটে এসেছিলেন। কিন্তু কোনোভাবেই বাজেটের সঙ্গে মিল রাখতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘দামে মিলতাসে না। মিইল্লা গেলে কিনমু, না হইলে আবার আইতে হইব আরকি।’ সকাল থেকেই গরুবোঝাই ট্রাক ঢুকতে শুরু করে গাবতলী হাটে। কেউ কেউ হাটের বিভিন্ন স্থানে সারিবদ্ধভাবে গরু রাখলেও অনেকে নিজের জায়গা ঠিক করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। অনেকে রোদ-বৃষ্টি থেকে পশুকে রক্ষা করতে ছাউনি তৈরি করছেন।

রহমতগঞ্জ: রহমতগঞ্জ হাটে গরু আর গরু। এদের মধ্যে একটি গরুর বড়জোর দুই মণ মাংস হবে। দেখতেও আকর্ষণীয় নয়। তারপরও গরুর মালিক আবদুর রহমান দাম চাইলেন ৭০ হাজার টাকা। হাসতে হাসতে ক্রেতা গোলাম মোস্তফা দাম বলেন ২৫ হাজার টাকা। ক্রেতারা বলছেন, গরুর প্রকৃত যে দাম তার চেয়ে অনেক বেশি দাম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। ছোট-বড় সব ধরনের গরু এনেছেন ব্যবসায়ীরা। সেরা গরুগুলো হাটের প্রবেশপথে রাখা হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্থানীয়রা তা দেখতে ভিড় জমান। শিশুদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

বাজারের সেরা গরুটি কুষ্টিয়ার আবদুল হান্নানের। গরুটির সামনে ভিড়। হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ বছর একটিমাত্র গরু নিয়ে এসেছি। নিজ হাতে একে লালন-পালন করেছি। এর পেছনে অনেক খরচ হয়েছে। ৫ লাখ হলে গরুটি বিক্রি করব।’

এ ছাড়া কালো রঙের দুটি বড় গরু নিয়ে এসেছেন কুষ্টিয়ার আরেক ব্যাপারী আতিয়ার রহমান। দুটির দাম হাঁকিয়েছেন নয় লাখ টাকা। গরুর গলায় ঝুলছে ফুলের মালা। আতিয়ার বলেন, ‘আমার নিজের খামার আছে। এই দুটি গরু ছাড়াও মোট বত্রিশটি গরু হাটে তুলেছি। আশা করি, যে আশা নিয়ে ঢাকায় এসেছি তা পূরণ হবে।’

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রহমতগঞ্জ বাজারে তোলা অধিকাংশ গরু এনেছেন কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের গরু ব্যবসায়ীরা। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় একটা গরু আনতে খরচ পড়েছে পাঁচ শ থেকে এক হাজার টাকা। ফরিদপুর থেকে ঢাকায় আনতে খরচ হয়েছে চার শ টাকা।

গরু ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় গরু আনার জন্য ট্রাকভাড়া দিতে হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। একটা ট্রাকে ৩০টি গরু এনেছেন। প্রতিটি গরুর পেছনে খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা। গরু দেখাশোনা করার জন্য আরও সাতজন লোক সঙ্গে এনেছেন। তাঁদের বেতনও দিতে হয়। আছে গরুর খাবারের খরচ।