দু্ই ওসি প্রত্যাহার, বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল সোমবার কালিহাতী ও ঘাটাইল থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে গতকাল হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে।
মা ও ছেলেকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের প্রতিবাদ ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গত শুক্রবার কালিহাতী উপজেলা সদরে বিক্ষোভ করেন কালিহাতী ও ঘাটাইলের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবিদ্ধ তিনজন ওই দিন এবং একজন রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার (এসপি) সঞ্জয় সরকার জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কালিহাতী থানার ওসি শহিদুল ইসলাম ও ঘাটাইল থানার ওসি মোখলেসুর রহমানকে প্রত্যাহার করে ঢাকা রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শনিবার কালিহাতী ও ঘাটাইল থানার তিন এসআই ও চার কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়।
কালিহাতীর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গতকাল হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী। পরে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর আংশিক শুনানি হয়। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ৩০ সেপ্টেম্বর শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
পরে ফাওজিয়া করিম প্রথম আলোকে বলেন, রিট আবেদনে কালিহাতীর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের পর আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিট আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও অতিরিক্ত ডিআইজি (শৃঙ্খলা), টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি)।
ঘটনা তদারকি করবে মানবাধিকার কমিশন: মা ও ছেলের ওপর নির্যাতন এবং এই ঘটনার প্রতিবাদকারীদের ওপর পুলিশের গুলির বিষয়টি সরেজমিন দেখতে গতকাল টাঙ্গাইলে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক রং লাগিয়ে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে রাষ্ট্রকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করবে বলেও তিনি জানান।
সকালে টাঙ্গাইল পৌঁছে মিজানুর রহমান টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্লীলতাহানির শিকার মা ও ছেলেকে দেখতে যান। তিনি সেখানে তাঁদের খোঁজখবর নেন ও একান্তে কথা বলেন। এ সময় তিনি তাঁদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান।
পরে মিজানুর রহমান কালিহাতীতে গিয়ে পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ও নিহত রুবেলের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদসদের প্রতি সমবেদনা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সরোয়ার হোসেন, ভারপ্রাপ্ত এসপি সঞ্জয় সরকার প্রমুখ।

আরও পড়ুন