মীরকাদিমের সাদা গাভি মেলে শুধু রহমতগঞ্জ মাঠে

ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদের দুই দিন আগে গতকাল বুধবার পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি মাঠে উঠেছে মীরকাদিমের ধবল গাই।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মীরকাদিম এলাকায় সাদা রঙের এ গাভিগুলো লালনপালন করা হয় পুরান ঢাকা, বিশেষ করে রহমতগঞ্জের বাসিন্দাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে। তাঁরা মীরকাদিমের গাভি কোরবানি দেন। একে তাঁরা ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেন।
গতকাল সকাল থেকে মীরকাদিমের খামারিরা মুন্সিগঞ্জ থেকে নদীপথে এসব গরু নিয়ে রহমতগঞ্জ পশুর হাটে পৌঁছাতে শুরু করেন, এটি গণি মিয়ার হাট নামেও পরিচিত। দেশে শুধু এই হাটেই মীরকাদিমের গাভি পাওয়া হয়। খামারিরা বলছেন, এবার মীরকাদিম থেকে দেড় হাজারের মতো গরু এসেছে। গতবার সরবরাহ কম থাকায় অনেক ক্রেতা খালি হাতে ফিরেছেন। চাহিদা বেশি থাকায় এবারও কাউকে ফিরে যেতে হতে পারে।
রহমতগঞ্জ হাটের মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই কয়েক সারিতে রাখা গাড়িগুলো চোখে পড়ে। সেখান থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় তিনটি মাঝারি আকারের গাভি কিনে হাসিল পরিশোধ করছিলেন রহমতগঞ্জের বাসিন্দা হুমায়ূন কবির। তিনি বলেন, ‘বাপ-দাদা সবাই মীরকাদিমের গরু কোরবানি দিছে। এইডা আমগোর খানদানের বিষয়।’
গোপালনগরের শুক্কুর মিয়া ৩৫ বছর ধরে রহমতগঞ্জ হাটে গরু নিয়ে আসেন। এবার তিনি ২০টি গরু এনেছেন বিক্রির জন্য। হাটে আনার দুই ঘণ্টার মধ্যে তাঁর ছয়টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সাধারণত খামারিরা এ জাতের গরুর জন্য ভারতের উড়িষ্যা, নেপাল, ভুটান এবং দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে উন্নত জাতের বাছুর সংগ্রহ করে সেগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বড় করেন। এসব গরুর খাদ্যতালিকায় থাকে নারকেল ও তিসির খৈল, বাছাই করা গম, বুট ও খেসারির ভুসি, খুদের জাউ, মাটিচাপা দিয়ে পচানো ধানের কুটা ইত্যাদি। এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস এবং কোনো ধরনের ঘাস খেতে না দেওয়ায় এসব গরুর মাংস হয় নরম ও সুস্বাদু।
প্রায় ২০ বছর ধরে মীরকাদিমের গাভি লালনপালনের সঙ্গে যুক্ত মোফাজ্জেল হোসেনের ভাষ্য, এসব গরু খুব যত্নের সঙ্গে পালন করা হয়। নিয়মিত গোসল করিয়ে গা মুছিয়ে দেওয়া, অতিরিক্ত গরমে ও শীতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা, গোয়ালে মশারির ব্যবস্থা রাখা এবং বাইরের মানুষ ঢুকতে না দেওয়ার মতো নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
গাভি বাদেও একই প্রক্রিয়ায় বড় করা কিছু ষাঁড় বাজারে এলেও সেগুলোর দাম এবং আগ্রহী ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে জানালেন মোফাজ্জেল হোসেন। দুপুরে একটুও দরদাম না করে ৮৭ হাজার টাকায় একটি গাভি কেনেন নাজিমুদ্দিন রোডের ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম। প্রতিক্রিয়ায় হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললেন, মীরকাদিমের গাইয়ের কাছে দাম কোনো বিষয়ই না। এই গাই কোরবানি না দিলে মনে হয় কোরবানিই হয় নাই।