সাংসদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ

সাংসদের গুলিতে রক্তাক্ত শিশু
সাংসদের গুলিতে রক্তাক্ত শিশু

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় গুলি করে শিশুকে আহত করার ঘটনায় গতকাল রোববার পর্যন্ত মামলার আসামি সাংসদ মন্জুরুল ইসলাম ওরফে লিটনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে আতঙ্কে ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিশুটির পরিবার। পুলিশের দাবি, সাংসদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ‘অবৈধ কাজে ব্যবহার করায়’ থানায় জমা দেওয়া সাংসদের দুটি আগ্নেয়াস্ত্রেরই লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সাংসদ মন্জুরুলকে গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাবাসী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গতকাল গাইবান্ধা জেলা শহর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরে পৃথক মানববন্ধনে তাঁরা অবিলম্বে সাংসদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তাঁদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে পুলিশ গড়িমসি করছে।
গত শুক্রবার সকালে বাড়ির পাশে সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙা সড়কে চাচা শাহজাহান আলীর সঙ্গে হাঁটার সময় গুলিবিদ্ধ হয় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শাহাদাত হোসেন (সৌরভ)। শাহাদাতের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাংসদ মন্জুরুল ওই সময় পাজেরো গাড়ি থামিয়ে শাহজাহানকে ডাকেন। শাহজাহান ভয়ে দৌড় দিলে সাংসদ গুলি চালান। এতে শিশুটির দুই পায়ে তিনটি গুলি বিদ্ধ হয়। বর্তমানে সে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত শনিবার রাতে শাহাদাতের বাবা সাজু মিয়া সাংসদকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় হত্যাচেষ্টা ও গুরুতর জখমের অভিযোগ আনা হয়।
সাংসদকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। মানববন্ধনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও যোগ দেন। এতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান পৌর মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তিন দিন পেরিয়ে গেলেও সাংসদকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সাংসদের কর্মকাণ্ড দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম বলেন, অবিলম্বে সাংসদকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
মানববন্ধনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন প্রামাণিক, পৌর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি মাসুদ-উল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এমদাদুল হক প্রমুখ অভিযোগ করেন, সাংসদকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ গড়িমসি করছে।
বিকেলে গাইবান্ধা জেলা শহরের ডিবি রোড এলাকায় বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন ও ছাত্র ইউনিয়ন গাইবান্ধা জেলা সংসদ এক মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি প্রতিভা সরকার ও জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শরিফুল ইসলামসহ বক্তারা বলেন, সাংসদের কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিবারের হতাশা ও ক্ষোভ: সাংসদ গ্রেপ্তার না হওয়ায় শিশুটির পরিবারেও হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। শাহাদাতের বাবা মামলার বাদী সাজু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মামলা করার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। সাংসদ গ্রেপ্তার না হওয়ায় আরও হতাশ। নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তিনি সরকারের কাছে জোর আবেদন জানান।
হাসপাতালে শাহাদাতের পাশে থাকা মা সেলিনা বেগম বলেন, ঘটনার পর থেকে তাঁদের হতদরিদ্র পরিবারটি আতঙ্কে আছে। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বেশ আর্থিক সংকটেও পড়ে গেছেন তাঁরা।
রংপুর মেডিকেলের শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক বাবুল কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহাদাত সুস্থ আছে। সে আশঙ্কামুক্ত।’
শুক্রবার সকালের ঘটনার পর থেকে সাংসদকে এলাকায় প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তবে এক সমর্থকের মাধ্যমে তিনি সুন্দরগঞ্জ থানায় ব্যক্তিগত একটি পিস্তল ও একটি শটগান পাঠিয়ে দিয়েছেন।
পুলিশ বলছে ‘বিধিবিধানের’ কথা: সাংসদকে গ্রেপ্তার না করার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসরাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আসামি একজন সাংসদ। বিধিবিধান অনুসরণ করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। সাংসদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযান চলছে।
সাংসদ গ্রেপ্তারের বিধিবিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিই দায়মুক্তি পেতে পারেন না। কোনো সাংসদের বিরুদ্ধে যদি ফৌজদারি অভিযোগ আসে, তাঁকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে সংসদ প্রাঙ্গণ থেকে কোনো সাংসদকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে স্পিকারকে অবহিত করতে হবে।
থানায় জমা দেওয়া সাংসদের আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ ব্যাপারে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। দুটি অস্ত্রেরই লাইসেন্স আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো থানায় থাকবে।
লাইসেন্স বাতিল: গতকাল রাত ১০টার দিকে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, থানায় জমা দেওয়া সাংসদের দুটি আগ্নেয়াস্ত্রেরই লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। অবৈধ কাজে ব্যবহার করার জন্য লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

আরও পড়ুন: