পাটগ্রামে ধরলার ভাঙনে হুমকিতে চার গ্রাম

ধরলা নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে চার গ্রাম। ছবিটি গত শনিবার বঁাশকাটা গ্রাম থেকে তোলা l প্রথম আলো
ধরলা নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে চার গ্রাম। ছবিটি গত শনিবার বঁাশকাটা গ্রাম থেকে তোলা l প্রথম আলো

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধরলা নদীর অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার চারটি গ্রামের আবাদি জমি, বাড়িঘরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। গ্রাম চারটি হলো বাঁশকাটা, মোমিনপুর, বসটারি ও ঘোষপাড়া (অধুনা বিলুপ্ত ১১৯ নম্বর বাঁশকাটা ছিটমহল)।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে যাওয়া ধরলা নদীটি ঘোষপাড়া দিয়ে ঢুকে বাঁশকাটা হয়ে মোমিনপুর ও বসটারি গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ঘোষপাড়া ও বাঁশকাটা অংশে নদীটি বাঁক খেয়েছে। এই বাঁকে প্রবল স্রোতের ঘূর্ণনে গত বর্ষায় ঘোষপাড়া-বাঁশকাটা কাঁচা সড়কের প্রায় ৪০০ গজ নদীতে বিলীন হয়। এতে পাটগ্রাম উপজেলা শহরের সঙ্গে ওই চার গ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এলাকাবাসী সড়কের ভেঙে যাওয়া অংশের পাশ দিয়ে ঘোষপাড়া ও বাঁশকাটর আবাদি জমির ওপর দিয়ে বিকল্প সরু একটি সড়ক দিয়ে কোনোমতে তাঁদের কৃষিপণ্য শহরে পরিবহনের কাজ চালাচ্ছেন।
ঘোষপাড়া গ্রামের খোদেজা বেগমের একসময় প্রায় চার একর জমি ছিল। তিনি জানান, গত কয়েক বছরে এর মধ্যে তিন একরই নদীতে বিলীন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘নদীটা যদি বান্দি (বাঁধ) না দেয়, তাহলে হামরা আর ভাতও খাবার পামো না।’
বসটারি গ্রামের অশ্বিনী কুমার বর্মণ বলেন, ‘ধরলা নদী শুধু বাড়িঘরই ভেঙে নিচ্ছে না, নদীটি আমাদের গিলে খাচ্ছে। এ পর্যন্ত পাঁচবার বসতবাড়ি সরাতে হয়েছে। জমিজমা সবই নদীগর্ভে গেছে।’

বাঁশকাটা গ্রামের পল্লি চিকিৎসক রেজাউল করিম বলেন, ৬৮ বছর পর হলেও তাঁরা এখন বাংলাদেশি। এখন এই চারটি গ্রাম রক্ষায় ধরলা নদীতে বাঁধ দেওয়া হোক। এত বছর ছিটমহলের বাসিন্দারা কোনো উন্নয়ন দেখেনি বা উন্নয়নের কথা বলতে পারেনি বলে জানান পল্লি চিকিৎসক। তাই জরুরি ভিত্তিতে নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাঁধসহ সড়কটি নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদুন নবী বলেন, ‘দীর্ঘ ৬৮ বছর পর হলেও ছিটমহল শব্দটি এখন মুছে এ এলাকা বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হয়েছে। এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে ভিজিএফসহ বিভিন্ন সরকারি সাহায্য দেওয়া হয়েছে। তবে রাস্তাঘাট সংস্কারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি।’

পাটগ্রাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) উত্তম কুমার নন্দী বলেন, ‘ইতিমধ্যে নদীভাঙনকবলিত সড়কটিসহ সেখানকার ছোট-বড় সড়কগুলো মেরামতের জন্য টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন করে বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’

লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি দল এসে সরেজমিনে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। তাঁরা বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জমা দেবেন। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করছি, নির্দেশনা পেলেই বাঁধের কাজ শুরু করা যাবে।’