লিটনের সংসদ সদস্যপদ বাতিলের দাবি

মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন
মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবি জানিয়েছে চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন। আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ১০টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের এই মঞ্চটি অবিলম্বে সাংসদকে খুঁজে বের করে শাস্তিরও দাবি জানিয়েছে।
মঞ্চের পক্ষে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, ‘একজন নির্বাচিত সাংসদ কী করে নিজের খেয়াল খুশিমতো গুলি ছোড়েন? পত্রপত্রিকায় এসেছে, সাংসদ মদ্যপ ছিলেন। এ ধরনের একজন ব্যক্তি কীভাবে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে এলেন? আমরাই বা কীভাবে তাঁকে নির্বাচিত করলাম? আমরা দেখেছি অপরাধ করার কারণে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়েছে। আমরা চাই এই সাংসদের সদস্যপদ বাতিল হোক।’
সাংসদকে ‘খুঁজে’ পাওয়া যাচ্ছে না এবং সাংসদের অস্ত্র থেকেই গুলিটি ছোড়া হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারছে না বলে যে বক্তব্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তারও সমালোচনা করে কোয়ালিশন। সুলতানা কামাল বলেন, ‘যে পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন সাংসদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁকেও দায়বদ্ধ করতে হবে। আমাদের আশঙ্কা হয় তাঁকে হয়তো বিচারের জন্য আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। না পাওয়া গেলে বুঝব তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়েছেন।’ 

কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রতিনিধি নাসিমা আক্তার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এসে সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেন। তিনি আসার আগে প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিতে পারেনি? সাংসদরা কি সুপিরিয়র? তাঁদের জন্য আইন এক ধরনের; আর সব মানুষের জন্য অন্য রকম? তিনি না কি নিখোঁজ, আবার তাঁর অস্ত্রও জমা হলো।’
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরের যে অবস্থা তা-ও শিশুটির জন্য অনুকূল ছিল না বলে উল্লেখ করেন তেরে দেস হোমস প্রতিনিধি এহসানুল হক। তিনি বলেন, ‘গুলি ছুড়েও সাংসদের মনে এতটুকু সহানুভূতি হয়নি। তাঁর সঙ্গে গাড়ি ছিল। তিনি চাইলেই শিশুটিকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পারতেন। তা না করে শিশুটিকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে হাসপাতালে যেতে বাধা দেয় তাঁর লোকজন।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মঞ্চের প্রতিনিধিরা বলেন, আগের বছরগুলোর তুলনায় শিশু নির্যাতনের সংখ্যা বেড়েছে। নির্যাতনের ধরন নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুরতর হয়েছে। সমাজে জবাবদিহির অভাব, বিচারের ঊর্ধ্বে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকা ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতি থেকে এ ধরনের নির্যাতন বাড়ে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
শিশুরা ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতির বলি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সেভ দ্য চিলড্রেনের উপপরিচালক শামসুল আলম। তিনি বলেন, রাজনীতিতে ক্যাডারদের প্রাধান্য বেশি এবং এই ক্যাডাররা হত্যার নিত্যনতুন কৌশল দেখিয়ে তাঁদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করছেন।
জুলাই মাসে সাত দিনে সাতটি শিশু হত্যা, সিলেটে রাজন ও খুলনায় রাকিব হত্যাসহ প্রতিদিন শিশু খুন, জখম ও ধর্ষণের ঘটনা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি এমরানুল হক চৌধুরী বলেন, মনে হয় পুরো জাতি যেন শিশুদের পেছনে লেগে আছে। সমাজের উচ্চপর্যায় থেকে নিচু স্তর পর্যন্ত কারও কাছে শিশুরা নিরাপদ নয়। সারা দেশের থানাগুলোয় নারী ও শিশুবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেও সরকার প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন শিশুদের প্রতি কেমন আচরণ করতে হবে সে সম্পর্কে পুলিশ যথেষ্ট সচেতন নয়।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহাদত হোসেনের বাসায় গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনাও চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশনকে মর্মাহত ও হতাশ করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

অারও পড়ুন :