ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ ও প্রয়াত কর্মকর্তাদের পরিবারগুলোর মধ্যে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করেন l ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ ও প্রয়াত কর্মকর্তাদের পরিবারগুলোর মধ্যে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করেন l ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত করতে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে গতকাল বুধবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের।
ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের নবনির্মিত একাডেমিক ভবন উদ্বোধন এবং সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ ও মৃত কর্মকর্তাদের পরিবারের মধ্যে ফ্ল্যাটের চাবি বিতরণ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর শহীদ কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহত কর্মকর্তাদের পরিবারকে ফ্ল্যাটগুলো হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকও বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রী ও সাংসদদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, নৌবাহিনী প্রধান, বিমানবাহিনী প্রধানসহ জ্যেষ্ঠ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সম্প্রতি দেশে দুই বিদেশি নাগরিককে হত্যা এবং অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যখনই জাতি কোনো সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে স্বীকৃতি অর্জন করে, তখনই একটি স্বার্থান্বেষী মহল কিছু পরিকল্পিত ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম ঘটায়। তবে জনগণ যদি সজাগ থাকে এবং সরকারকে সহযোগিতা করে, তাহলে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না।
উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার অব্যাহতভাবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। সরকারের প্রচেষ্টা ও কর্মঘণ্টার বিরাট অংশ এতে ব্যয় হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যদি এ ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রয়োজন না হতো, তাহলে দেশের আরও উন্নয়নে আমাদের প্রচেষ্টা ও শ্রম কাজ লাগাতে পারতাম।’
জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি ও আর্মড ফোর্সেস গোল, ২০৩০-এর খসড়া তৈরির প্রক্রিয়াসহ সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের জন্য সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তাঁর সরকার সেনা কর্মকর্তাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিতে একাডেমি ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। এবার ক্ষমতায় এসেও তিনি বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তিনি দেশ গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ থেকে নারী কন্টিনজেন্ট পাঠানোর অনুরোধের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বৈশ্বিক এ আকাঙ্ক্ষায় সম্মতি দিয়েছে। তিনি এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারী কন্টিনজেন্ট গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
পিলখানা হত্যাযজ্ঞের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা আমি ভালোভাবে বুঝি। পিলখানা হত্যাযজ্ঞে জড়িত অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় আনা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, অতিদরিদ্রের হার ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
জার্মান মন্ত্রীর সাক্ষাৎ: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অগ্রগতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সফররত জার্মান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী গার্ড মুলার। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, জার্মানি এ খাতের আরও উন্নয়নে সহায়তা দেবে। গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ আশ্বাস দেন জার্মান মন্ত্রী। দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি ও চামড়া খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ এ খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জার্মান মন্ত্রীকে জানান। দেশে আরও বেশি জার্মান বিনিয়োগ কামনা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আলব্রেখট কোনজে এ সময় উপস্থিত ছিলেন।