হরতালে পেছাল জেএসসি পরীক্ষা

শুরুতেই হোঁচট খেল জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা। পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আজ সোমবার থেকে এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিরোধী দলের টানা তিন দিনের হরতালের কারণে পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

পরিবর্তিত সময়সূচি অনুযায়ী আজকের নির্ধারিত পরীক্ষা নেওয়া হবে ৮ নভেম্বর শুক্রবার। ওই দিন বেলা সোয়া দুইটায় পরীক্ষা শুরু হবে। আর বুধবারের (৬ নভেম্বর) পরীক্ষা হবে ৯ নভেম্বর শনিবার। ওই দিন সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হবে।

গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলকে বারবার অনুরোধ করেছিলাম হরতাল প্রত্যাহার করার জন্য। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তারা অবিবেচকের মতো কাজ করেছে। আমরা তাদের মতো অবিবেচক নই। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের হিংস্রতার মুখে ঠেলে দিতে পারি না। তাদের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আশা করব, এর পরও বিরোধী দলের উপলব্ধি হবে। পরবর্তী পরীক্ষাগুলো শান্তিপূর্ণভাবে করতে দেবে।’

নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, অন্যান্য পরীক্ষা আগের সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। আগের সময়সূচি অনুযায়ী আজ সোমবার জেএসসিতে বাংলা প্রথম পত্র, জেডিসিতে কোরআন মাজিদ ও তাজবিদ এবং বুধবার জেএসসির বাংলা দ্বিতীয় পত্র ও জেডিসিতে আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার জেএসসি ও জেডিসিতে মোট পরীক্ষার্থী ১৯ লাখ দুই হাজার ৭৪৬ জন। এর মধ্যে জেএসসিতে পরীক্ষার্থী ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩১৩ এবং জেডিসিতে পরীক্ষার্থী তিন লাখ ১৫ হাজার ৪৩৩ জন। সময়সূচি অনুযায়ী ২০ নভেম্বর পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু যেভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে, তাতে ঠিক সময়ে পরীক্ষা শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুন নূর প্রমুখ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও পেছাল: হরতালের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ও ৬ নভেম্বরের পরীক্ষা স্থগিত করে নতুন সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সম্মান প্রথম বর্ষের পরীক্ষা হবে ৯ নভেম্বর এবং সম্মান চতুর্থ বর্ষ ও এমবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা হবে ৭ নভেম্বর। অন্যদিকে ৬ নভেম্বরের পরীক্ষা হবে ৭ নভেম্বর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

হাইকোর্টে রিট আবেদন: পাবলিক পরীক্ষা চলাকালে হরতাল না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ গত বছরের ২৬ এপ্রিল একটি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২ মে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে পাবলিক পরীক্ষা চলাকালে হরতাল আরোপ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে হরতাল আরোপ না করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। রিটে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, বিএনপির মহাসচিব, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষাসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়।