ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন সাকা ও মুজাহিদের

সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ
সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ

একাত্তরে গণহত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর আইনজীবী মো. হুজ্জাতুল ইসলাম খান এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের অন্যতম আইনজীবী শিশির মনির প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ফৌজদারি মামলায় রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ কম। সাধারণত দৃশ্যমান কোনো আইনগত ত্রুটির ক্ষেত্রেই রায় পুনর্বিবেচনা আমলে নেওয়া হয়। তা ছাড়া রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ খুবই কম বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে দণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন তা বহাল থাকবে।’
সাকা চৌধুরীর রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন:
সাকা চৌধুরীর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম দুপুরের দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। ১০৮ পৃষ্ঠার এ আবেদনে ১০টি যুক্তি দেওয়া হয়েছে।
সাকা চৌধুরী গাজীপুরের কাশিমপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এ ফাঁসির সেলে বন্দী রয়েছেন। গত ৬ অক্টোবর কারাগারে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম। সাক্ষাৎ শেষে এই আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের ব্যাপারে সাকা চৌধুরী তাঁকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এ আবেদন করা হবে। সেই অনুসারে আজ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হলো।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পরে খালাস চেয়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিলের রায়েও তাঁর সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে।

মুজাহিদের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন:
জামায়াত নেতা মুজাহিদের অন্যতম আইনজীবী শিশির মনির সকালের দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। ৩৮ পৃষ্ঠার এ আবেদনে ৩২টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। পরে মুজাহিদের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছি। এ জন্য আমরা বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছি। আমরা আশা করি, আমাদের যুক্তি ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত যে দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল, আদালত তা বাতিল করবেন।’

মুজাহিদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে আছেন। গতকাল মঙ্গলবার এই জামায়াত নেতার সঙ্গে তাঁর আইনজীবীরা সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, মুজাহিদ এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ ওই আবেদন করলেন মুজাহিদ।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে সর্বোচ্চ সাজা দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। খালাস চেয়ে ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায়ে আপিলেও তাঁর সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে।

মুজাহিদের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। একই দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপিল মামলারও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই দিন রাতে আপিল বিভাগের এই দুটি পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়। ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর মৃত্যু পরোয়ানায় সই করে কারাগারে পাঠান।