বিশ্ব গণমাধ্যমে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার

পিলখানায় ২০০৯ সালে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে আদালত আজ মঙ্গলবার ১৫২ জনকে ফাঁসি ও ৪১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন। অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন ২৭৭ জন। এ সংবাদটি বিশ্ব গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়েছে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ‘ঢাকায় স্থাপিত এক বিশেষ আদালত আজ মঙ্গলবার কয়েক শ বিদ্রোহীর মধ্যে দেড় শ জনের বেশি বিদ্রোহীকে হত্যা ও আগুন লাগানোর দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।’

মামলার কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেইন কাজলকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, ‘দেশের সাহসী সন্তানদের হত্যা করার দায়ে আদালত এঁদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।’

রয়টার্স মন্তব্য করেছে, ‘এ ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন নির্বাচিত সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।’

সংবাদ সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘বিদ্রোহের পর আধাসামরিক বাহিনীটির নাম বাংলাদেশ রাইফেলস থেকে বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ করা হয়েছে। ... দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর মামলার রায় দেওয়া হলো। মামলা চলার সময় অভিযুক্তদের চারজন কারাগারেই মারা গিয়েছিলেন। দণ্ডিতদের ২০ জন এখনো পলাতক এবং ১৩ জন জামিনে আছেন। দণ্ডিত ৮১৩ জন এখনো কারারুদ্ধ।’

রয়টার্স জানায়, ‘বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে এখন পর্যন্ত চার হাজার জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অবশ্য সব বিচারই হয়েছে সামরিক ট্রাইব্যুনালে। এঁদের সবার কমপক্ষে সাত বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে।’

বিবিসি মামলার রায়ের বাইরে বিচারকের বক্তব্যও দিয়েছে। বিচারক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বলেছে, ‘ঘটনা এত নৃশংস ছিল যে, মৃতদেরও তাঁদের অধিকার দেওয়া হয়নি।’

বিবিসি আরও বলেছে, ‘অবশ্য বিচারকেরা বলেছেন, অসন্তোষ কমাতে বিজিবির সদস্যদের আরও ভালো বেতন দেওয়া উচিত।’

মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানকে বলেন, ‘তারা যেন সন্তানদের সেনা পরিচালিত স্কুলে পাঠাতে পারে তার সুবন্দোবস্ত থাকা প্রয়োজন।’

বিবিসির মতো গালফ নিউজও মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো।’

বিজিবির প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদকে উদ্ধৃত করে গালফ নিউজ বলেছে, ‘বিচার হয়েছে ... যে পরিবারগুলো নিকটজনদের হারিয়েছে, আমাদের মতো যারা সহকর্মী ও বন্ধুদের হারিয়েছে তারা কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাবে।’

বার্তা সংস্থা এপির বরাতে প্রতিবেদন করেছে ‘লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস’। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যকার টানাপোড়েনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে এ বিদ্রোহ। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আজ এক স্কুলের সামনে স্থাপিত বিরাট আদালতকক্ষে গিজগিজ করা হাজার খানেক অভিযুক্তের সামনে রায় দেওয়া হয়। মামলার বিবাদী ছিলেন ৮৪৬ জন। এ বিচারকাজের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।’

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কারাগারে থাকার সময় তাঁদের ওপর নির্যাতন ও অত্যাচার চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মানবাধিকার গ্রুপটি বলছে, ঘটনার আরও নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত ছিল এবং গুরুতর অপরাধের অভিযোগগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন ছিল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া শাখার পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস গত ২৯ অক্টোবরে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘একটি বিশাল আদালতকক্ষে শত শত অভিযুক্তকে হাজির করে, তাঁদের খুব সামান্য বা কোনো ধরনের কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বিচার করাতে বিচারে আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকেনি।’