সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে বিএনপি

সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। ক্ষমতায় থাকার মধ্যে জন্ম নেওয়া দলটি এর আগে এত দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনার বাইরে ছিল না। আজ শুক্রবার পর্যন্ত দলটি টানা ৮ বছর ১১ মাস ২৫ দিন ক্ষমতার বাইরে। এর আগে দলটি টানা ৮ বছর ১১ মাস ২৪ দিন ক্ষমতার বাইরে ছিল।

টানা ক্ষমতার বাইরে থাকলেও ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপি সংসদে প্রধান বিরোধী দল ছিল। এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দলটি প্রথম দফায় বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করে। অবশ্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি সরকারি বা বিরোধী কোনো স্থানেই নেই। যদিও রাজনীতিতে বিএনপি রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে এখন পরিচিতি পাচ্ছে। অবশ্য বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগ এর আগে টানা প্রায় ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল।
সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনো দিন পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে নির্বাচনের বাকি আছে আরও তিন বছরেরও বেশি সময়। অবশ্য বিএনপি ‘অবিলম্বে’ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। ইতিমধ্যে সেই আন্দোলনের প্রথমেই হোঁচট খায় দলটি। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে তিন মাস টানা আন্দোলনে ‘ব্যর্থ’ হয়ে ‘আপাতত’ সেই আন্দোলন থেকে দূরে রয়েছে দলটি। তবে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, দল গুছিয়ে আবারও আন্দোলন নামবে তাঁর দল। সরকার বলছে, নির্বারিত সময়ের আগে নির্বাচন দেওয়ার কোনো চিন্তা তাদের নেই।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি গণমানুষের দল। বিভিন্ন বিপর্যয়ে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন যে দীর্ঘসময় ক্ষমতার বাইরে এর পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ও বিএনপির নিজেদের কিছু বিষয়ে ব্যর্থতা আছে বলে তিনি মনে করেন।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি দল ক্ষমতায় থাকবে বা বাইরে যাবে—এটাই স্বাভাবিক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকলে ক্ষমতায় থাকা বা না থাকা কোনো ব্যাপার ​নয়। দেশের জন্য কাজ করাই মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এখন গণতন্ত্র নেই। এ পরিস্থিতিতে দলের নেতা-কর্মীরা দুঃসহ অবস্থায় আছেন। তবে এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের এক পটভূমিতে ৭ নভেম্বর ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান সামরিক শাসক থাকা অবস্থায় প্রথমে তিনি ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগেই ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি হন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হলে তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার কিছু সময়ের জন্য সরকার ও দলের হাল ধরেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর থেকে ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত টানা ৮ বছর ১১ মাস ২৪ দিন ক্ষমতার বাইরে ছিল বিএনপি। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতা হারালেও পরের সংসদ নির্বাচনে ২০০১ সালে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় যায় দলটি। সর্বশেষ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত টানা ৮ বছর ১১ মাস ২৫ দিন ক্ষমতার বাইরে রয়েছে দলটি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল, কিন্তু তারা জনগণের পাশে ছিল। ক্ষমতা দখলকারীদের কারণে আওয়ামী লীগ বাইরে ছিল। আর বিএনপি জনগণের পাশে না থেকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। তাই তাদের এই পরিণতি। দুটি দলের অবস্থান ও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।