রোগীর মৃত্যু, ক্লিনিকে হামলা

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় নাগেশ্বরী জনতা ক্লিনিকে ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে ওই নারীর আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে ক্লিনিকে হামলার চেষ্টা করেন। পরে নাগেশ্বরী থানার পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মারা যাওয়া নারীর নাম শরিফা বেগম (২৮)। তিনি নাগেশ্বরী পৌরসভার মাজারপাড়া গ্রামের আতাউর রহমানের স্ত্রী। শরিফার মৃত্যুর পর থেকে তাঁর অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক আমিনুর রহমান গা ঢাকা দিয়েছেন। গতকাল রোববার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, শরিফা বেগম পিত্তথলিতে পাথর হওয়াজনিত জটিলতা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জনতা ক্লিনিকে ভর্তি হন। ক্লিনিকের চিকিৎসক আমিনুর রহমান শনিবার সকালে তাঁর অস্ত্রোপচার করেন। ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রোগীর অবস্থার অবনতি হয়। তখন ডা. আমিনুর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রোগীকে মাইক্রোবাসে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পথে রোগী মারা যান। রাতে লাশ বাড়িতে নিয়ে এলে স্থানীয় লোকজন খেপে ওঠেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে তাঁরা জনতা ক্লিনিক ঘেরাও করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটকে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। উত্তেজিত জনতা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। পরে নাগেশ্বরী থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মৃত শরিফা বেগমের স্বামী আতাউর রহমান বলেন, ‘ক্লিনিকেই আমার স্ত্রী মারা গেছেন। তাঁরা বিষয়টি আমাদের না বলে রংপুরে পাঠান।’ তিনি প্রতারণার দায়ে ক্লিনিকটি বন্ধ করাসহ অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেন।
ক্লিনিকের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, অস্ত্রোপচারে ভুল ছিল না। তবে কী কারণে রোগীর মৃত্যু হলো তা বলা যাচ্ছে না।
নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আককাছ আহমেদ বলেন, উত্তেজিত জনতাকে ভাঙচুর না চালিয়ে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়। পরে তারা সরে যায়।
স্থানীয় লোকজন বলেন, জনতা ক্লিনিকে এর আগেও একাধিক রোগীর মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ২০১৩ সালের ২৯ জুন রাতে পৌর এলাকার বাগডাঙ্গা গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে রুহুল আমিনকে (৮) এ ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে শিশুটির লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। ওই দিনই বিকেলেও গ্রামবাসী ক্লিনিক ঘেরাও করেন। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বেড়াকুটি ঘুঘুরহাট এলাকার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী গোলাপী বেগম (২৪) ২০১৩ সালের ৯ জুলাই অস্ত্রোপচারের পর ক্লিনিকে মারা যান। সেদিনও একইভাবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ একটি মাইক্রোবাসে করে লাশ তাঁর বাবার বাড়ি দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্লিনিকে তালা লাগিয়ে দিলেও ক্লিনিকের পরিচালক মতিয়ার রহমান আবারও কার্যক্রম শুরু করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জি আর এম মোকছেদুর রহমানও স্বীকার করেন ওই ক্লিনিকে এ রকম ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় ঘটনাগুলো তদন্ত করা হয়নি বলে জানান তিনি। এবারের ঘটনাতেও কেউ অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
ক্লিনিকের পরিচালক মতিয়ার রহমানের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।