যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে শিগগিরই আইন প্রণয়ন করা হবে। আইনটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আইনের খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।

আজ সোমবার রাজধানীতে আইনটির খসড়ার ওপর এক মতবিনিময়সভায় এসব কথা বলেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, আইনটি পাস হওয়ার আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের জন্য জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠাবেন তিনি। তিনি বলেন, এখন নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে না কমেছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে নারীরা যেকোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে কথা বলছেন। আগের মতো চুপচাপ বসে থাকছেন না। সরকারও নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। তাই নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে সরকার আন্তরিক।
মতবিনিময় সভায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষা বিভাগের প্রধান অব্রে ম্যাককাচিন বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। সমস্যাটিতে প্রতিনিয়তই নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি দশ জন নারীর মধ্যে নয়জন নারীই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে যৌন হয়রানির শিকার হন।
আইনের বিষয়ে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, আদালতের যুগান্তকারী রায়ের ফল হিসেবে এ আইনটি প্রণীত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন যৌন হয়রানির ঘটনার প্রেক্ষিতে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে কেন রাষ্ট্রীয় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না এই মর্মে ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট মামলা করেন সালমা আলী। আদালত ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সকল প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠনের আদেশ দেওয়া হয়। কোন কোন আচরণকে যৌন হয়রানি বলা যাবে, এর প্রতিকার, কমিটির দায়িত্ব এবং কমিটি গঠন সংবলিত রায় ওই আদেশে দেওয়া হয়। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন-২০১০ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়।
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফওজিয়া করিম ফিরোজের সভাপতিত্বে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ আইন কমিশনের সচিব মো. আলী আকবর। মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রকল্প সমন্বয়ক মিতালী জাহান আইনের খসড়ার নানা দিক তুলে ধরেন। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিরা।