বিএনপি থেকে শমসের মবিনের পদত্যাগ

.
.

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী রাজনীতি থেকে ‘অবসর’ নিয়েছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে লেখা চিঠিতে এই অবসর নেওয়ার পাশাপাশি বিএনপির সব পদ থেকেও পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
গতকাল বুধবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে দলীয় চেয়ারপারসন বরাবর চিঠিটি পাঠান শমসের মবিন। চিঠি দেওয়ার দিন থেকে তিনি আর বিএনপির কোনো পদে থাকছেন না বলেও উল্লেখ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শমসের মবিন চৌধুরী প্রথম আলোকে ওই চিঠি দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির কোনো পদে তিনি আর থাকছেন না।
খালেদা জিয়ার কাছে পাঠানো চিঠিতে শমসের বলেন, অসুস্থতার কারণে তিনি আর রাজনীতিতে থাকছেন না। রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন। যেহেতু তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন, তাই বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে লেখা চিঠিতে শমসের বলেন, ‘আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলাম। সে কারণে আমাকে বিভিন্ন সময় দেশে বিদেশে নানাবিধ চিকিৎসা নিতে হয়েছে। বর্তমানে আমার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। আমার বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে আমি অনতিবিলম্বে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবসর গ্রহণের প্রেক্ষিতে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সকল পদ থেকেও পদত্যাগ করলাম।’ সংক্ষিপ্ত ওই চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার স্বাস্থ্যগত সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সামনে রেখে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার প্রয়াস আমার চিরকাল থাকবে।’
শমসের মবিন চৌধুরী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। সেনাবাহিনী থেকে তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়োগ পান। দ্বিতীয় মেয়াদে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া কূটনীতিক হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। ২০০৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হন। ২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে তিনি দলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন।

সদ্য পদত্যাগ করা বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মহাখালী ডিওএইচএসে নিজ বাসভবনে। ছবি: জাহিদুল করিম
সদ্য পদত্যাগ করা বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মহাখালী ডিওএইচএসে নিজ বাসভবনে। ছবি: জাহিদুল করিম


সামরিক কর্মকর্তা থেকে আমলা ও পরে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা শমসের মবিন বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টি দেখভাল করা নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন।

সদ্য পদত্যাগ করা বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মহাখালী ডিওএইচএস এ তাঁর বাসভবনে বই-পত্র দেখছেন। ছবি: জাহিদুল করিম
সদ্য পদত্যাগ করা বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মহাখালী ডিওএইচএস এ তাঁর বাসভবনে বই-পত্র দেখছেন। ছবি: জাহিদুল করিম

চলতি বছরের শুরুতে বিএনপি লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করলে ৮ জানুয়ারি বনানীর বাসা থেকে শমসের মবিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২২ মে তিনি জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তিনি ছিলেন একেবারে চুপচাপ। কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাঁকে দেখা যায়নি। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকেও ছিলেন না শমসের।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, কারাগারে যাওয়া ও মুক্তির পাওয়ার পর শমসের মবিন চৌধুরী দলের কাছ থেকে যথাযথ সহায়তা পাননি বলে কিছুটা মনক্ষুণ্ন ছিলেন। পাশাপাশি পদত্যাগের জন্য তাঁর ওপর এক ধরনেরর চাপ ছিল বলেও দলে আলোচনা আছে।
অারও পড়ুন :-
শমসেরকে আওয়ামী লীগের অভিনন্দন