আমার গ্রাম: রূপান্তরের রেখাচিত্র

শতবর্ষী বিদ্যালয়ের সামনে লেখক তোফায়েল আহমেদ (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: সৌরভ দাশ
শতবর্ষী বিদ্যালয়ের সামনে লেখক তোফায়েল আহমেদ (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: সৌরভ দাশ

ভৌগোলিক অবস্থান
উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার একটি প্রাচীন জনপদ। একক কোনো একটি নামে পরিচয় করানো যাবে না। কারণ প্রচলিত প্রশাসনিক সীমারেখাকে নতুনভাবে বিন্যাস করেই আলোচনার সুবিধার্থে নতুন জনপদটি সৃষ্টি করা হলো। পূর্ব সীমানা চট্টগ্রাম শহরের শূন্য থেকে চট্টগ্রাম-রামগড় মহাসড়কের ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটারের মাইলফলক। দক্ষিণ থেকে উত্তরে যথাক্রমে নন্দিরহাট, ইসলামিয়া হাট ও মদনহাট তিনটি প্রাচীন বাজার। পশ্চিমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর সড়ক এবং দক্ষিণে ধোপার দিঘিসংলগ্ন লোকনাথ আশ্রম সড়ক। এভাবে যে বর্গক্ষেত্রটি কল্পনা করা হলো সেখানে বিভিন্ন পাড়া, গ্রাম, বাড়ি নামে বিচ্ছিন্ন এবং সংলগ্ন আঠারোটি জনবসতি। যার আয়তন প্রায় চার বর্গকিলোমিটার। এ জনপদে হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত চট্টগ্রাম-রামগড় সড়ক এবং পশ্চিমে পাহাড়, মাঝখানে আবার চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেললাইন। আঠারোটি গ্রামের প্রতিটি বাড়িই সড়ক-মহাসড়কের সঙ্গে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে সুন্দরভাবে যুক্ত।
লেখা ও দেখার পটভূমি
এ আঠারোটি ভিন্ন ভিন্ন নামের পাড়া বা গ্রামগুচ্ছের ঠিক মধ্যখানে না হলেও মাঝামাঝি একটি পাড়ায় আমিও জন্মেছি। তাই জন্মে চোখ মেলেই এ জনপদকে দেখেছি। এ জনপদ ছিল আমার একসময়ের বিশ্বজগৎ। ধীরে ধীরে দেখার দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছে। ওই প্রাচীন জনপদ ছোট থেকে ছোটতর হয়েছে। দূর থেকে কল্পনা বা স্মৃতি তর্পণের জন্য দেখেছি। কিন্তু এবার লেখার জন্য দেখতে গিয়ে এ জনপদকে নতুনভাবে আবিষ্কারের নেশা জেগেছে। কিন্তু আবিষ্কার এখনো শেষ হয়নি। যেমন এমিরিগো ভেসপুচি ভারত আবিষ্কার করতে গিয়ে আমেরিকা আবিষ্কার করেছিল। তেমনি ১৯৭০ সালকে ভিত্তিবছর ধরে ২০১০-এর পরের পরিবর্তনগুলোকে তুলে ধরাই ছিল প্রাথমিক উদ্দেশ্য। যাতে গ্রামাঞ্চলের রূপান্তরের একটি ব্যাকরণের কিছু সূত্র আমরা পেতে পারি। কিন্তু গ্রামে নেমে প্রতিক্ষণে নতুন নতুন বিষয়, আগের চিন্তাভাবনাগুলোকে এলোমেলো করে দিচ্ছিল। গ্রামের নতুন রূপ বা রূপান্তরের ভিত্তি সৃষ্টির জন্য এলাকার কিছু প্রাচীন স্মারকচিহ্ন বা ইতিহাস বারবার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল, যাকে উপেক্ষা করা ছিল সাধ্যাতীত। তাই রূপান্তরের রেখাচিত্র আঁকতে গিয়ে বারবার কিছু বাতিঘর দৃষ্টি পথে আসছিল, সেগুলোকে বাদ দিয়ে রূপান্তরের চলক বিশ্লেষণ নিরর্থক মনে হতে লাগল। তাই এ আলোচনাকে দুটি অংশে পৃথকভাবে বিন্যস্ত করা হলো। প্রথম এ জনপদের অতীত-বর্তমানের মিথস্ক্রিয়ার কিছু খণ্ডচিত্র, দ্বিতীয়ত সীমিত কিছু চলকের মাধ্যমে পরিবর্তনের স্বরূপ বিশ্লেষণের প্রয়াস ও শেষে ভবিষ্যৎ সমাজচিন্তকদের জন্য কিছু প্রশ্ন রেখে রচনার সমাপ্তি টানা হয়েছে।

শতায়ু সমাহার

লেখার জন্য জনপদকে দেখতে গিয়ে প্রথমে এ জনপদের প্রধান বাতিঘর শতবর্ষ প্রাচীন একটি বিদ্যাপীঠ ফতেয়াবাদ উচ্চবিদ্যালয়ের উল্লেখ করতে হয়। ফতেয়াবাদ চৌধুরীহাট এলাকার এককালের জমিদার স্বর্গীয় রজনীকান্ত পাল ও শ্রীবরদা চরণ নন্দী যৌথ অনুদান এবং কিছু শিক্ষানুরাগীর প্রচেষ্টায় ১৮৯৪ সালে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ সালে এ বিদ্যালয়ের শততম বার্ষিকী উদ্যাপিত হয়। চট্টগ্রামের অন্যতম এ প্রাচীন বিদ্যাপীঠে সে সময়ের সেরা শিক্ষকেরা পাঠদান করতেন। পাকিস্তান সময়ে (১৯৬৫) ওই স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক মাসে ২৫০ টাকা বেতন নিতেন। তখন সমমর্যাদার সরকারি কর্মচারীরা এত বেতন পেতেন না। এ বিদ্যালয় পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণের দশ মাইল এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে গেছে, যে আলোয় আমি যে জনপদ নিয়ে আলোচনা করছি সে জনপদও আলোকিত হয়। ১৯১১-১২ সালে নির্মিত বিদ্যালয় ভবন, ১৯৬০-৬২ সালের বিজ্ঞান ও কারিগরি ওয়ার্কশপ, মিলনায়তন এখনো এর প্রধান স্থাপনা। দুই থেকে আড়াই একরের একটি দিঘি, পেছনে তার দ্বিগুণ আয়তনের খেলার মাঠ, দিঘির তিন পাড়ব্যাপীবিদ্যালয়ের ক্লাসরুম, বিজ্ঞানাগার, ওয়ার্কশপ ও মিলনায়তন। ১৯৭০ সালে শিক্ষক ছিলেন ২০ থেকে ২২ জন। ছাত্র প্রায় পাঁচ শ। বর্তমানে ছাত্র এক হাজার ৪৫০ এবং শিক্ষক ২৭। ১৯৯৪ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক ছিলেন তখন ২২ জন। বর্তমানে তা কমে হয়েছে ১২ জন। তবে মোট শিক্ষকসংখ্যা ২৭। ১২ জন বাদে অন্যদের বেতন দিতে হয় স্কুলের নিজস্ব তহবিল থেকে। শতবর্ষীয় বিদ্যালয়ের অবকাঠামোয় গত ৪০ বছরে (বাইরের কিছু দোকানপাট ছাড়া) উল্লেখযোগ্য সংযোজন দেখা গেল না। এখন আশপাশে এক-দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই অনেক নতুন বিদ্যালয় হয়েছে, হয়েছে অনেক নতুন ভবন।

এ জনপদের শতায়ু তালিকায় এ বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে হয় দুজন শতায়ু ব্যক্তির নাম। একজন এ বিদ্যালয়েরই শিক্ষক পণ্ডিতপ্রবর প্রমোদরঞ্জন ভট্টাচার্য। ১৯০৭ সালের মার্চ মাসে তাঁর জন্ম। ১৯৩৫ সালে কলকাতা থেকে ২৭ বছর তিন মাস বয়সে সংস্কৃত ও ব্যাকরণে একটি বিশেষ ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে তিনি প্রবেশিকা পাস করেন। তার পরের দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের চাকরি করে সর্বশেষে ফতেয়াবাদেই স্থিত হন। ২০০৮ সালে হন শতায়ু। উত্তর ফতেয়াবাদের লোকনাথ আশ্রমসংলগ্ন ব্রাহ্মণপাড়ায় ছেলে, নাতি-পুতি নিয়ে বসবাস করছেন। প্রতিদিনই প্রায় ছাত্র ও ভক্তদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হন সবার প্রিয় পণ্ডিত মহাশয়। আমিও পণ্ডিত মহাশয়ের ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্যের অধিকারী। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে যেভাবে আধুনিকতার একজন প্রতিমূর্তি হিসেবে দেখা যায়, আমাদের পণ্ডিত মহাশয় মাথায় টিকি, কপালে চন্দন-তিলক পরেও ছিলেন বরাবরই অন্তরে একজন আধুনিক মানুষ। ছোটবেলায় তিনি আমাদের কাছে ছিলেন সাক্ষাৎ একজন বিদ্যাসাগর। সনাতন ধর্ম ছাড়াও তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়াতেন। তিনি যে একজন ব্রাহ্মণ-পুরোহিত শ্রেণীকক্ষে এবং বাইরে তার আচরণে তা বোঝা যেত না। তার রসবোধ এবং সে রসবোধ অপরের মধ্যে সঞ্চারে তিনি ছিলেন অসাধারণ এক শিল্পী। শিক্ষকতাকে করেছিলেন তিনি শিল্পসুষমামণ্ডিত। তাঁর আবৃত্তি ও ছন্দজ্ঞান ছিল অসাধারণ।

পণ্ডিতপ্রবর প্রমোদরঞ্জন ভট্টাচার্যের পর দেখা মিলল এক শতায়ু নারীর। খররমা রুদ্র। ফতেপুর কুলাল পাড়ার বাসিন্দা ওই অঞ্চলের সবার প্রিয় ‘বড় মা’। খররমা রুদ্র কানে শোনেন কম। একই অবস্থা পণ্ডিত মহাশয়েরও। তবে চোখে এখনো চশমা ছাড়া ভালোই দেখেন। স্মৃতিও পুরোপুরি প্রতারিত করে না। স্বামীর স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারি চাকরির সুবাদে ভারতের আসাম, মণিপুরসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে সর্বশেষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হেঁটে মিয়ানমার থেকে স্বামীসহ চলে আসেন চট্টগ্রামে। যুদ্ধের পর স্বামী পুনরায় মিয়ানমার গিয়ে চাকরিতে যোগ দেন। তিনি গ্রামেই থেকে যান দুই মেয়েসহ। পরে ৫০-এর দশকের কোনো এক সময় স্বামীর মিয়ানমারে দেহান্তর ঘটে। সেই থেকে তিনি বিধবা এবং গ্রামে ধাত্রী হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করেন।

ধাত্রীদের তাদের হাতে জন্ম নেওয়া সন্তানেরা চট্টগ্রামে ‘বড়মা’ ডাকে। সে সূত্রে খররমা রুদ্র সবার বড়মা। এলাকার একসময়ের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হোসেন বলেন, বড়মার নাম এ ইউনিয়ন পরিষদের বয়স্ক ভাতার তালিকায় প্রথম নাম হিসেবে রাখা হয়েছে। কুলাল পাড়ার গীতাসংঘ তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালন করে ২০০৮ সালে। পাড়ার ছেলে-বুড়োনির্বিশেষে সবাই তাঁর প্রতি খেয়াল রাখে। পুকুরে ডুব দিয়ে স্নান করতে ভালোবাসেন। তবে সাহায্যের প্রয়োজন হয়, একা ঘাটের সিঁড়ি ভাঙতে পারেন না। তাঁর সঙ্গে কথা হলো স্নানের আগে পুকুরঘাটে। এ অঞ্চলে শতায়ু ব্যক্তি এ দুজনই। তবে প্রতিষ্ঠান অনেক রয়েছে। বেশ কিছু মসজিদ, মন্দির ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে, যা শতবর্ষের অধিক সময় ধরেই বিরাজমান।

দুই: বিস্ময়কর বৈষয়িক উত্থান ও বিপন্ন নীতি-নৈতিকতা

এ জনপদের দক্ষিণ অংশের হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত সাহাপাড়া, দত্তবাড়ি, সেনবাড়ি, বামনপাড়া, ধোপাপাড়া প্রভৃতি ব্রিটিশ সময়কাল থেকে শিক্ষাদীক্ষায় ছিল অগ্রগামী। পাকিস্তানের শেষ সময় পর্যন্ত এ এলাকায় স্নাতক পর্যায়ের ডিগ্রিধারী পেশাজীবীর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জনের নাম পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ব্রজকিশোর সাহা। তিনি ১৯৩৬-৬২ এই ২৪ বছর পর্যন্ত ফতেয়াবাদ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ডা. রাম প্রসাদ সেন, যিনি আর পি সেন নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের নিউরো চিকিৎসকের একজন হিসেবে তাঁর নাম শোনা গিয়েছিল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী, তবে জানা যায় কলকাতায় জেসি বোস রোডে ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স নামে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর ভাই বিজয়শ্রী সেনও একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। তা ছাড়া দত্ত পরিবারের প্রধানও একজন নামকরা চিকিৎসক এবং তাঁর সব ছেলেমেয়ে পাকিস্তান সময়েই অত্যন্ত ভালো ফলাফল করে বিভিন্ন বিচিত্র বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন।

সেনরা এখনো শিক্ষাদীক্ষার চর্চায় পিছিয়ে নেই। দত্ত ও সেনদের মতো শিক্ষাদীক্ষায় স্বাধীনতার পর আর বেশি দূর এগোতে পারেনি সাহারা। বিশেষত ছেলেরা। বিখ্যাত সুরকার সত্য সাহা এই ফতেয়াবাদেরই সাহাপাড়ার সন্তান। লোকগায়ক শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবও সাহাপাড়াসংলগ্ন পৃথক একটি পাড়ায় জন্ম নিয়েছেন। শোনা যায়, সাহারা-ই বৈষ্ণবদের জমি দান করে এখানে বসবাসে সহায়তা করে। সাহাপাড়া, ব্রাহ্মণপাড়া, দত্তবাড়ি, সেনবাড়ি, রক্ষিতবাড়ি, ধোপাপাড়া, হাঁড়িপাড়া সব মিলিয়ে বর্তমানে খানাসংখ্যা প্রায় ৭০০। তবে সবাই গ্রামে থাকেন না। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নরওয়ে, ভারতে বেশ কিছু পরিবার পুরোপুরি অভিবাসী। তা ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে বৈবাহিক ও কর্মস্থলের কারণে অনেকে বসবাস করে থাকে।

সাহাপাড়ার পশ্চিমে মাহমুদাবাদ বেশ বড় গ্রাম। এ গ্রাম ছিল কৃষি ও কৃষকপ্রধান। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রসার এখানে ছিল না। পাকিস্তান সময়ে লেখাপড়া জানা লোক হাতে গোনা কয়েকজনের বেশি ছিল না। কিন্তু স্বাধীনতার প্রথম দশকের পর থেকে এ গ্রামের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটতে থাকে। বিশেষত ব্যবসা ও বিদেশে দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে তারা ব্যাপক সংখ্যায় গমন করে। এখন ওই পাড়ার আর্থিক সমৃদ্ধি আগের জমিদার ও পেশাজীবী অধ্যুষিত সাহাপাড়ার চেয়েও অনেক বেশি। নতুন প্রজন্মে শিক্ষার হার অভাবিতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই গ্রামের মধ্যে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও নতুন পুঁজির একটা সমন্বয় ঘটেছে। গ্রামের ভেতরে বেশ কিছু ছোট ছোট কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক স্থানীয় কর্মসংস্থান। ফতেয়াবাদের এ ছয়টি এলাকা ছাড়া আলোচ্য ফতেপুর অংশে প্রায় বারটি পাড়া, বাড়ি ও গ্রাম । ওই গুচ্ছে নতুন-পুরোনো বসতি মিলিয়ে প্রায় এক হাজার ৪৩০টি খানা বা পরিবারের বাস। তার মধ্যে স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দির বাইরের পূর্ব সীমানা ঘেঁষে নতুন আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। যেখানে দু-তিন গুচ্ছে প্রায় দেড় শ পরিবার বসবাস করছে। এখানে প্রায় সবাই আদি গ্রামবাসীর কাছ থেকে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। তাঁদের অনেকের বাড়ি চট্টগ্রামেরই অন্যান্য স্থানে, তবে অনেকেই চট্টগ্রামের বাইরের। তাঁরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বাকি গ্রাম ও পাড়ার মধ্যে বুধার বাড়ি (৬৫), কুলালপাড়া (২৫৩), রাজাফকিরপাড়া (১৪৭), আলম ফকিরের বাড়ি-বাড়ৈপাড়া (৩১৯), জামতলা থেকে দুলারপাড়ার শেষ প্রান্ত (২৩৭), লতিফপাড়া (১৩৪), তেলিপাড়া (৮৮) সব মিলিয়ে কুলালপাড়ার ২৫৩ পরিবার ছাড়া বাকি সবাই মুসলমান। ফতেয়াবাদ অংশ ও ফতেপুর অংশ মিলিয়ে পুরো এলাকার খানাসংখ্যা সর্বমোট প্রায় তিন হাজার। এলাকার সর্বমোট আয়তন প্রায় চার বর্গকিলোমিটার। যেকোনো বিচারে এ এলাকা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। ১৯৭০ সালের আগে সাহাপাড়া, দত্তবাড়ি ও সেনবাড়ি ছাড়া হিন্দু-মুসলমাননির্বিশেষে বাকি পরিবারগুলোর জীবন-জীবিকা ছিল কৃষিনির্ভর। বর্তমানে কৃষিতে এ অঞ্চলের ২০ শতাংশ পরিবারও জড়িত নয়। শিক্ষার হার বেড়েছে অবিশ্বাস্য রকম। এই অঞ্চলে বর্তমানে অন্তত ৩০০-এর অধিক গ্র্যাজুয়েট রয়েছেন। ফতেপুর অংশের বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন নতুন বসতির ১৫০ খানা ছাড়া বাকি এক হাজার ৩০০ খানার মধ্যে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ছিলেন মাত্র দুজন। একজন মাহবুবুল আলম এবং অপরজন অধ্যাপক অর্ধেন্দু বিকাশ রুদ্র। বর্তমানে ওই এলাকায় শ খানেক গ্র্যাজুয়েট। আলোচ্য এলাকার পুরোটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক থেকে চার কিলোমিটারের মধ্যে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্কুল ও কলেজ ছাড়াও গ্রামের অভ্যন্তরে রয়েছে দুটি হাইস্কুল, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি কিন্ডারগার্টেন এবং দুটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এগুলো ছাড়াও প্রায় সাতটি মক্তব ও ফিডার স্কুল রয়েছে।