তাঁরা কথা রেখেছেন

দেশব্যাপী টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল গতকাল বুধবার শেষ হয়েছে। তবে হরতাল চলাকালে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও নাটোরের বড়াইগ্রামে সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয় সব রাজনৈতিক দলের নেতারা সহিংসতা বন্ধের অঙ্গীকার করেছিলেন। ফলে ওই দুই জায়গায় জনমনে ছিল স্বস্তি। জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক।
গতকাল সকালে নাগেশ্বরী উপজেলা সদরে গিয়ে দেখা যায়, অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা। যান চলাচলে কোনো বাধা নেই। শুধু দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস-ট্রাকগুলো বন্ধ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, হরতালের আগের দিন রোববার নাগেশ্বরীতে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করে বিএনপি। আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি পালন করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে সহিংসতা বন্ধে নাগেশ্বরী পৌরসভার মেয়র আবদুর রহমান নিজ উদ্যোগে উপজেলার সব রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাসহ শিক্ষক, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করেন। পরে পৌর মেয়রকে আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যের নাগেশ্বরী উপজেলা নাগরিক অধিকার ফোরাম গঠন করা হয়।
আবদুর রহমান বলেন, ‘নাগেশ্বরীবাসী সংঘাত নয়, শান্তি চায়। তাই দলমত-নির্বিশেষে এ কমিটি গঠন করেছি। আশা করি, দেশের অন্যান্য এলাকায় এ পথ অনুসরণ করা হবে।’
এদিকে হরতালসহ যেকোনো পরিস্থিতিতে সহিংসতা বন্ধে অঙ্গীকার করেছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গত শনিবার বনপাড়ায় সর্বদলীয় সভায় এই অঙ্গীকার করা হয়। প্রশাসন এ ঘটনাকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবারের পর থেকে বনপাড়ায় শান্তির সুবাতাস বইছে। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ও হরতালজনিত সহিংসতায় সারা দেশের রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হলেও এর উত্তাপ স্পর্শ করতে পারেনি বড়াইগ্রামকে।
সর্বদলীয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোমবার হরতালের শুরুর দিন বিএনপি, জামায়াতসহ ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে বনপাড়ায় হরতালের সমর্থনে মিছিল করেন। তাঁরা হরতাল পালনে কাউকে বাধ্য করেননি। কোনো সহিংসতার ঘটনাও ঘটেনি। এ সময় আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতারা পাল্টা কর্মসূচি দেননি। বিকেলে বনপাড়া বাজার এলাকায় ১৪ দল হরতালবিরোধী মিছিল বের করে। মিছিল শেষে জোটের নেতা-কর্মীরা পৌর ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেন। পরের দিন মঙ্গলবার উভয় জোটের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশ করেন। সকালে উপজেলার ধানাইদহ গ্রামের কিছু লোক নাটোর-পাবনা সড়কে কয়েকটি ট্রাক আটকে দেন। খবর পেয়ে ১৮-দলীয় জোটের নেতারা সেখানে গিয়ে ট্রাকগুলোর যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেন। গতকালও বড়াইগ্রামে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)) মোহামঞ্চদ ইব্রাহিম বলেন, ‘বড়াইগ্রামের সব দলের নেতা-কর্মীকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। তাঁরা কথা রেখেছেন। আশা করব, আগামীতেও তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবেন।’