আইন লঙ্ঘন করে কৃষিজমিতে ইটভাটা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আগানগরে কৃষিজমিতে গড়ে তোলা ইটভাটা। ৫ অক্টোবর তোলা ছবি l প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আগানগরে কৃষিজমিতে গড়ে তোলা ইটভাটা। ৫ অক্টোবর তোলা ছবি l প্রথম আলো

আইন লঙ্ঘন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণ করছেন স্থানীয় চার ব্যক্তি। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইটভাটাটি অবৈধ বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দেওয়ার পরও মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
ইউএনওর কাছে দেওয়া ওই প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার থোল্লাকান্দি গ্রামের আবদুল লতিফসহ ব্যক্তি কৃষিজমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ করছেন। তাঁরা বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আকানগরস্থ ১৩ নম্বর মৌজার দেড় একর জমিতে ইটভাটার স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। তাঁরা গত বছরের নভেম্বর মাসে নির্মাণকাজ শুরু করেন।
বিষয়টি জানতে পেরে তেজখালী ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের তৎকালীন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মকবুল হোসেন অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করায় মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনওর কাছে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর প্রতিবেদন পাঠান। একই দিন প্রতিবেদনের অনুলিপি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবরও দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ), ২০১৩-এ উল্লেখ করা হয়েছে, কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমোদনপত্র না নিয়ে ইটভাটায় ইট প্রস্তুতও করা যাবে না।
৬ অক্টোবর আকানগরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঞ্ছারামপুর-সলিমগঞ্জ-নবীনগর সড়কের পাশে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পাহাড়িয়াকান্দি গ্রামের পূর্ব দিকে কেবিসি নামের ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। ইট পোড়ানোর জন্য ৫০ ফুট লম্বা একটি চিমনি স্থাপন করা হয়েছে। ইটভাটার পাশের জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন এলাকার কৃষকেরা। ভাটায় ইট তৈরি করতে জমি সমান করার কাজ করছেন ১৫-১৬ জন শ্রমিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘যারা ইটাখোলা দিয়েছে, হেরা শক্তিশালী (প্রভাবশালী)। এই জায়গায় ইটা পোড়াইলে পাশের আমাগোর জমিতে কোনো ফসল অইব না।’
ইটভাটার মালিক আবদুল লতিফ মুঠোফোনে বলেন, ‘ইট পোড়ানোর চুলা নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে, তবে অনুমোদন পাইনি এখনো। ডিসি ও ইউএনও বরাবর আবেদনও করেছি আট-নয় মাস আগে। এখন ইট তৈরির জন্য লোকজন কাজ করতাছে। ’
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, ‘অনুমোদন ছাড়া ইট পোড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আকানগরে অনুমোদন ছাড়া কেউ ইট তৈরি করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই-খাজা আলামীন বলেন, তিনি ওই প্রতিবেদনের ব্যাপারে কিছু জানেন না। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন বলেন, কেউ অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ করলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের উপপরিচালক মোছাব্বের হোসেন বলেন, ‘আকানগরে কোনো ইটভাটা নির্মাণে পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য কোনো আবেদন পাইনি। আমি নতুন এসেছি। কালকেই (আজ) বাঞ্ছারামপুরের আকানগরে লোক পাঠিয়ে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’