রায়েরবাজারে দেশের সবচেয়ে বড় কবরস্থান

রায়েরবাজারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় কবরস্থান l ছবি: সাহাদাত পারভেজ
রায়েরবাজারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় কবরস্থান l ছবি: সাহাদাত পারভেজ

রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পেছনে দেশের সবচেয়ে বড় কবরস্থান নির্মাণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। একসঙ্গে সাড়ে ৮৫ হাজার কবর দেওয়ার জায়গা রয়েছে এতে। কবরস্থানটি আগামী ডিসেম্বরে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ডিএনসিসির।

২০১০ সালের জুলাই মাসে ‘রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ-সংলগ্ন কবরস্থান উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের প্রকল্প নেয় ডিএনসিসি। এর বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয় ৫০৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ডিএনসিসির অর্থায়ন এবং উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের ৫-আর ই ব্যাটালিয়ন।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, রায়েরবাজার কবরস্থানে মোট জমির পরিমাণ ৯৬ দশমিক ২৩ একর। মূল কবরস্থান ৮১ দশমিক ৩০ একরের। প্রকল্পে মূল কবরস্থান ছাড়াও ভেতরে দুটি লেক, হাঁটাপথ, দুটি মসজিদ, জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য পাঁচ একর জায়গা, ৬ দশমিক ১৩ একর জমিতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-২) কার্যালয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের শহর ঢাকায় কবর দেওয়ার জায়গার তীব্র সংকট। ডিএনসিসি এলাকায় আটটি কবরস্থান থাকলেও চালু আছে মাত্র চারটি, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। রায়েরবাজার কবরস্থানটি চালু হলে ঢাকায় কবর দেওয়ার জায়গার অভাব কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।

গতকাল বৃহস্পতিবার কবরস্থানটি ঘুরে দেখা যায়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর চারপাশে সুউচ্চ লাল ইটের সীমানাপ্রাচীর তোলা হয়েছে। প্রবেশের তিনটি ফটক তৈরি সম্পন্ন। ভেতরে স্নিগ্ধ পরিবেশ। মৃদু বাতাসে লেকের পানিতে ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। লেকের পাড় ধরে বাঁধানো হাঁটাপথ। নতুন লাগানো গাছের চারাগুলো বেড়ে উঠতে শুরু করেছে।   

কবরস্থানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা লেকের ওপর তিনটি সংযোগ সেতু। শিশুদের কবর দেওয়ার আলাদা জায়গা করা হয়েছে। খানিক পরপর লাগানো হয়েছে বাতি। পাঁচ জায়গায় বানানো হয়েছে পানি ও শৌচাগারসহ ‘সুবিধা কেন্দ্র’। আছে নানা জাতের ফুলের বাগান।

রায়েরবাজার কবরস্থানটি নিয়ে এলাকার লোকজনও উৎসুক। ফটকের নিরাপত্তারক্ষী জানালেন, মাঝেমধ্যেই লোকজন এসে জানতে চান কবে খুলে দেওয়া হবে। বছিলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ঢাকায় যেভাবে মানুষ বাড়ছে, মারা গেলে কবর দেওয়ার জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি এলাকায় কোনো কবরস্থান নেই। এটা চালু হলে আশপাশের মানুষ উপকৃত হবে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের শুরুতে রায়েরবাজার কবরস্থানের জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত মামলা করে স্থানীয় লোকজন। অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য কবরস্থান প্রকল্পের মধ্যে পাঁচ একর জায়গা রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কবরস্থানে লোকজনের আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে ডিএনসিসি মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বছিলা সেতু পর্যন্ত ১২০ ফুট প্রস্থের নতুন রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৩ সালের মার্চ থেকে সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে। প্রকল্পের কাজ শেষ। ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কবরস্থানটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে ডিএনসিসির।