২৫০ টিকিটের ২০০টি কালোবাজারিদের হাতে

কিশোরগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার রেলপথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম আন্তনগর ‘এগারসিন্দুর’ ট্রেনের বরাদ্দ করা ২৫০টি টিকিটের ২০০টি চলে যায় কালোবাজারিদের হাতে। প্রতিদিন অধিকাংশ যাত্রীকে বেশি দামে ওই টিকিট কিনতে হচ্ছে। স্টেশনের আশপাশের একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে কালোবাজারে এ টিকিট বিক্রি করছেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভায় টিকিট কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রতিদিন ভুক্তভোগীরা প্রায় দু-তিন গুণ বেশি দামে টিকিট কিনে ঢাকায় যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের ব্যবসায়ী নাদিম হোসেন গত বৃহস্পতিবার কাউন্টারে লাইন ধরেও টিকিট পাননি। বাধ্য হয়ে তিনি শোভন শ্রেণীর ১২০ টাকার টিকিট বাইরে থেকে ২৪০ টাকায় কিনে ঢাকায় রওনা হন।
নাদিম জানান, প্রায়ই তিনি ঢাকায় যান। কোনো দিনই কাউন্টারে টিকিট পান না। একই কথা বললেন শহরের শোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা নূরুজ্জামানসহ কমপক্ষে ৩০ জন যাত্রী। তাঁরা জানান, কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে প্রথম শ্রেণীর ১৮৫ টাকার টিকিট ৪০০ টাকায়, শোভন চেয়ার ১২০ টাকার টিকিট ২৫০ টাকায় কিনে তাঁদের ঢাকায় যেতে হচ্ছে।
যাত্রীরা অভিযোগ করেন, স্টেশনের নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্যে প্রকাশ্যে কালোবাজারির দল টিকিট বিক্রি করলেও রেলের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিকার বা প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
রেলওয়ে কার্যালয় থেকে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের সঙ্গে রেলপথে ঢাকার সহজ যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ‘এগারসিন্দুর আন্তনগর ট্রেন সার্ভিস’। ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ থেকে প্রতিদিন সকাল পৌনে সাতটা এবং বেলা একটায় (ডাবল সার্ভিস) ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আবার ঢাকা থেকে সকাল আটটা ২০ মিনিটে এবং সন্ধ্যা ছয়টা ২০ মিনিটে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসে।
সচেতন নাগরিক কমিটির (কিশোরগঞ্জ) সদস্য অধ্যাপক আবদুল গনি জানান, ‘এগারসিন্দুর’ ট্রেনের বরাদ্দ করা ২৫০টি টিকিটের ২০০টি চলে যায় কালোবাজারিদের হাতে। এ কারণে প্রতিদিন যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনের প্রধান হিসাবরক্ষক দেলোয়ার হোসেন জানান, এগারসিন্দুরে কিশোরগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ১২০ টাকা দামের সুলভ শ্রেণীর জন্য ১২০টি টিকিট, ১৪০ টাকা দামের শোভন চেয়ার ১১০টি এবং ১৮৫ টাকা দামের প্রথম শ্রেণীর ২০টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৬৫০ থেকে ৭০০ টিকিট বিক্রি হয়। যার অধিকাংশ শোভন শ্রেণীর টিকিট।
কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশনমাস্টার জয়ন্ত মজুমদার বলেন, ‘জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভায় ওই চক্রের কথা বলেছি। এরা প্রভাবশালী, ভয়ংকর এবং সংঘবদ্ধ। এদের কাছে সবাই অসহায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলে ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে। অন্যথায় কিছু করার নেই।’