দেশ বাঁচাতে সংলাপ হতে হবে: বিএনপি

দেশ বাঁচাতে হলে অবশ্যই সর্বদলীয় বৈঠক করতে হবে। জাতীয় ঐক্যের সূচনা করতে হবে। সংলাপও হতে হবে। এখানে গোঁয়ার্তুমির কোনো সুযোগ নেই।
গতকাল রোববার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
গত বৃহস্পতিবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব থেকে সরে এসে একটি জাতীয় সংলাপের সূচনা পরিবেশকে উন্মুক্ত করবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে মানুষ পুড়িয়ে মারে, তার সঙ্গে বসার ইচ্ছা নাই। ওনার সঙ্গে বসলে তো পোড়া মানুষের গন্ধ আসবে।...হ্যাঁ, উনি যদি বলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত। বর্তমানে যে বিচার হচ্ছে, তা ঠিক আছে। এটা সমর্থন করি। এই কথাটা ওনার মুখে আসলেই তখন তিনি সংলাপে বসার যোগ্যতা অর্জন করবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে কীভাবে দেখছেন—জানতে চাইলে শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শর্ত সাপেক্ষে সংলাপের কথা বলেছেন। অর্থাৎ তিনি এক পদক্ষেপ এগিয়ে এসেছেন।’
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা ইচ্ছা বলতেই পারেন। কিন্তু তিনি যে প্রশ্নগুলোর অবতারণা করেছেন, শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনীতিকের বক্তব্য এমন হতে পারে না। বিএনপি কী করবে, না করবে, তা বিএনপির বিষয়। বিএনপি জাতীয় সংলাপের কথা বলেছে। সুনির্দিষ্ট কোনো দফা আদায়ের কথা বলেনি বা কোনো দাবি আদায়ের জন্য সংলাপ চায়নি। দেশে এখন একটি সংকট চলছে, অস্থিরতা বিরাজ করছে। মানুষের মধ্যে সৃষ্ট উৎকণ্ঠা দূর করা ও আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। সে জন্য জাতীয় সংলাপের প্রয়োজন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলেছি, যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী অপরাধের সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার চাই এবং এ প্রশ্নে আমাদের সমর্থন রয়েছে, তারপরেও নিছক রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে শাসক দল একধরনের গোয়েবলসীয় প্রোপাগান্ডা অব্যাহত রেখেছে।’
চলমান বিচার বিএনপি সমর্থন করে কি না—এমন প্রশ্নে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, বিএনপি বিচার চায়, এ বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের নানা পর্যবেক্ষণ রয়েছে। এ পর্যবেক্ষণগুলো ‘মিট’ (সুরাহা) করা সরকারের দায়িত্ব।
আসাদুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ‘আইএস’ ঘটিয়েছে—এমন স্বীকারোক্তির জন্য সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। এ তথ্যে সমগ্র জাতি উৎকণ্ঠিত। কারণ এর পরিণাম বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। এ জন্য বিএনপি চায় সবাই মিলে বিপদের হুমকি মোকাবিলা করা হোক।
বিএনপির বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগের বিষয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন করেছে। আন্দোলন চলাকালে কোনো ধরনের সহিংসতার সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। সরকার উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে বিরোধী দলকে দেশে-বিদেশে হেয় করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আসাদুজ্জামান দাবি করেন, সংলাপের আহ্বান বিএনপির দুর্বলতা নয়। সরকারের সৌভাগ্য যে নির্মম-নির্যাতন চালানোর পরও সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ ও বিস্মিত করেছে।